OPS-এর নতুন নিয়ম ২০২৫: সকল কর্মচারীদের জন্য বড় স্বস্তি, সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

দেশের সরকারি কর্মীদের বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন কি অবশেষে সত্যি হতে চলেছে? সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে ঘিরে সরকারি কর্মচারী মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, দেশের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের জন্য দারুণ স্বস্তি নিয়ে এসেছে এই রায়। এর ফলে অবসর গ্রহণের পর আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। তবে কি পুরনো পেনশন স্কিম (Old Pension Scheme) ফিরিয়ে আনার পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত?

কী আছে পুরনো পেনশন ব্যবস্থায়?

পুরনো পেনশন ব্যবস্থা (OPS) হলো একটি সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্প, যেখানে কর্মীরা অবসর গ্রহণের পর নিশ্চিত আর্থিক সুবিধা পান। এই ব্যবস্থার অধীনে, পেনশন নির্ধারণ করা হয় একজন কর্মীর শেষ মূল বেতনের ভিত্তিতে, এবং তা আজীবন নিয়মিতভাবে দেওয়া হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ক্ষেত্রে কর্মীকে নিজের পকেট থেকে কোনো টাকা দিতে হয় না। পেনশন দেওয়ার পুরো দায়িত্ব থাকে সরকারের ওপর। বাজারের ওঠানামা বা অর্থনৈতিক অস্থিরতার কোনো প্রভাব এর ওপর পড়ে না। এছাড়াও, এতে পারিবারিক পেনশনেরও সুবিধা আছে, যার ফলে কর্মীর মৃত্যুর পর তাঁর নির্ভরশীল সদস্যরাও আর্থিক সহায়তা পান।

নতুন পেনশন ব্যবস্থায় কেন এত বিতর্ক?

২০০৪ সালে চালু হওয়া নতুন পেনশন ব্যবস্থা (New Pension Scheme) থেকেই বিতর্কের শুরু। এই পদ্ধতিতে, কর্মীদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে বাজারে বিনিয়োগ করা হয়। ফলে, পেনশনের পরিমাণ পুরোপুরি বাজারের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর কারণে অনেক কর্মীই তাঁদের প্রাপ্য পেনশন পাননি, যা তাঁদের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করে। বিশেষ করে, যাদের অবসরের পর আয়ের আর কোনো উৎস নেই, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা ছিল রীতিমতো উদ্বেগের। এই কারণেই সারা দেশে কর্মী সংগঠনগুলো পুরনো পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার কর্মীদের চাপে পুরনো পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কথাও ঘোষণা করে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রভাব কী হতে চলেছে?

বিচারবিভাগের এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে, পেনশন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, অবসর গ্রহণের পর আর্থিক নিরাপত্তা একজন কর্মীর মৌলিক অধিকার। এই রায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য নয়, রাজ্য সরকারের কর্মীরাও এর থেকে উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি, চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরাও এই সুবিধা পেতে পারেন। এই সিদ্ধান্তটি সামাজিক ন্যায়বিচার এবং কর্মী কল্যাণ সংক্রান্ত ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

নতুন নিয়মে কীভাবে পেনশন গণনা করা হবে?

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কর্মীরা তাঁদের শেষ মূল বেতনের ৫০ শতাংশ পেনশন হিসেবে পাবেন। এর সঙ্গে নিয়মিত মহার্ঘ ভাতাও যোগ হতে থাকবে, যাতে পেনশনের প্রকৃত মূল্য বজায় থাকে। উদাহরণ হিসেবে, যদি কোনো কর্মীর শেষ মূল বেতন ৫০,০০০ টাকা হয়, তাহলে তিনি প্রতি মাসে ২৫,০০০ টাকা পেনশন পাবেন। এছাড়াও, গ্র্যাচুইটি এবং অন্যান্য সুবিধা তো থাকছেই। সবচেয়ে বড় কথা, এই পেনশন আজীবন পাওয়া যাবে এবং কর্মীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী বা স্বামী পারিবারিক পেনশন পাবেন।

সরকারি কোষাগারে কতটা প্রভাব পড়বে?

এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকারি কোষাগারে অতিরিক্ত চাপ পড়বে, কারণ এখন থেকে পেনশন দেওয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, সামাজিক সুরক্ষার জন্য এই খরচ অপরিহার্য। সরকারকে তাদের আর্থিক পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা থাকলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এই পেনশন ফান্ডের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ করা হতে পারে।

এই রায় কি সামাজিক ন্যায়বিচারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল?

এটি শুধু একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারি কর্মীরা সমাজ এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের অবসরের পর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের জন্য অপরিহার্য। এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্মীদের মনোবল বাড়বে এবং তাঁরা আরও বেশি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। এর ফলে সরকারি চাকরির প্রতি নতুন প্রজন্মের আকর্ষণও বাড়বে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *