জিওএসটি কমলেও কেন কমছে না নিত্যপণ্যের দাম? উৎসবের মরশুমেও স্বস্তি নেই, আধা ঘণ্টায় বিলিং!
উৎসবের মরশুমের আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে জিএসটি কমানোর ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। প্রচারের ঝংকারে সেই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং প্রচারের নেতৃত্ব দিয়ে জানিয়েছিলেন, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্রেতারা কম দামে জিনিসপত্র পাবেন। তবে প্রথম দিনেই সেই ঘোষণার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সোমবার বাজার ঘুরে দেখা গেল, জিএসটি কমলেও খুচরো বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ক্রেতাদের একাংশ বঞ্চিত হয়েছেন, অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন কিছুটা স্বস্তি।
সিঁদুরে মেঘ খুচরো বাজারে
শিয়ালদহ, হাতিবাগান ও বেহালার খুচরো বাজারে জিএসটির নতুন হার নিয়ে কোনো বাড়তি আগ্রহ দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে এখনো পুরোনো স্টক রয়ে গেছে, যা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বিস্কুট, চানাচুর বা অন্যান্য প্যাকেটজাত পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না কারণ নতুন রেটে তৈরি পণ্য এখনও বাজারে আসেনি। এক দোকানির কথায়, পুরোনো স্টক শেষ হতে আরও অন্তত ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। ফলে কবে থেকে দাম কমবে, তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে, কসমেটিক্স, সাবান, তেল, খাতা ও নোটবুক-এর মতো পণ্যেও জিএসটির সুবিধা থেকে ক্রেতারা বঞ্চিত হয়েছেন। রাজেশ সাউ নামে এক মুদি দোকানি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “নিজের লোকসান করে ব্যবসা করব না। পুরোনো স্টক শেষ হলেই নতুন জিএসটি হারে মাল কিনব।” প্রশ্ন উঠেছে, যদি পুরোনো স্টক শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে দিনক্ষণ ঘোষণা করে নতুন হার চালু করার অর্থ কী?
স্বস্তি শুধু পাইকারি ব্যবসায়ীদের
খুচরো বাজারের এই ছবি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পাইকারি বাজারে। শিয়ালদহের পাইকারি বিক্রেতা পঙ্কজকুমার গুপ্ত জানান, ১২% জিএসটি দিয়ে পণ্য কিনলেও তারা তা ৫% জিএসটি চাপিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না, কারণ এই ঘাটতি নতুন ব্যবস্থায় পূরণ হয়ে যাবে।
বিলিং-এ প্রযুক্তির যন্ত্রণা
নয়া জিএসটির হার চালু হওয়ার প্রথম দিনেই প্রযুক্তিগত জটিলতা দেখা দিয়েছে একাধিক শপিং মল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। চিনার পার্কের একটি বিপণিতে কেনাকাটা করে বিল মেটাতে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে এক ক্রেতাকে, কারণ ‘সিস্টেম আপডেট’ না হওয়ায় বিলিং সম্ভব হচ্ছিল না। একই সমস্যা দেখা গেছে বেলেঘাটার একটি ব্র্যান্ডেড দোকানেও। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিল মেটানো যায়নি। দিনভর এমন পরিস্থিতি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেক ক্রেতা।
ঔষধের ক্ষেত্রেও একই ছবি
ওষুধের দোকানেও দেখা গেছে একই চিত্র। যে ক্রেতারা জিএসটি কমার খবর জানেন, তারা নতুন হারে বিল চাইছেন, কিন্তু পুরোনো স্টকের কারণে অনেক ক্রেতাকে বেশি দামে ওষুধ কিনতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে পুরোনো স্টকের ওষুধ আগের দামেই বিক্রি করা হয়েছে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। গড়িয়াহাটের এক কেকের দোকানের মালিক জানিয়েছেন, পেস্ট্রির দাম সোমবার কমেছে। যা গতদিন পর্যন্ত ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, তা এখন কমে হয়েছে ৩৫ থেকে ৪২ টাকা। তবে এই স্বস্তি কেবল কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছু দিন।