ইতালিতে কেন ক্ষেপেছে হাজার হাজার মুসলিম উদ্বাস্তু ও বামপন্থী গোষ্ঠী? প্রধানমন্ত্রী মেলোনির এক ঘোষণায় উত্তাল দেশ – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অস্বীকৃতির পর রাজধানী মিলানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। উগ্র বামপন্থী ও মুসলিম উদ্বাস্তুরা শহরে তাণ্ডব চালিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করেও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনি জানিয়েছেন, ‘এই সহিংসতা ছদ্মবেশী ফিলিস্তিনপন্থী ও অ্যান্টিফা গোষ্ঠীর কাজ। রেলস্টেশন ভাঙচুর করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তাদের এই তাণ্ডবের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু এর ফল ইতালীয় জনগণকেই ভোগ করতে হবে।’
শনিবার একটি ইতালীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেলোনি জানান, তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে, কিন্তু তার মতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই তাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘যদি কাগজে-কলমে এমন কিছুকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই, তাহলে সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হতে পারে, যখন আদতে তার কোনো সমাধান হয়নি।’
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এর নিন্দা জানায়।
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপের পর ইসরায়েল তাদের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান কমিয়ে দেওয়ার এবং প্যারিসের আঞ্চলিক উদ্যোগে জটিলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অনেক ফরাসি মন্ত্রীও অবস্থান নিয়েছেন। ইউরোপে ইহুদি ও মুসলিমদের বৃহত্তম সম্প্রদায়ের আবাসস্থল ফ্রান্সই প্রথম প্রধান পশ্চিমা দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে, যা অন্য ছোট দেশগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি তখনই হওয়া উচিত যখন তারা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কাইর স্টারমার বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী নিরাপত্তার একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।
জার্মানি অবশ্য জানিয়েছে, তারা আপাতত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না। কারণ, তাদের মতে ইসরায়েলের সহযোগিতা ছাড়া এই পদক্ষেপ কেবল প্রতীকী হবে। যদিও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান ইসরায়েলি সরকার আলোচনায় আগ্রহী নয়, তাই কূটনৈতিক চাপই একমাত্র পথ।
এএফপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপক্ষে ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বলছে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হামাস সন্ত্রাসী ছিল।