ট্রাম্পের এক বক্তব্যে কেন তোলপাড় চিকিৎসক মহলে? গর্ভবতী নারীদের কোন ওষুধে বিপদের ইঙ্গিত দিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এবার তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গর্ভবতী নারী ও একটি বহুল প্রচলিত ব্যথানাশক ওষুধ। ট্রাম্পের দাবি, গর্ভাবস্থায় সচরাচর ব্যবহৃত ওষুধ টাইলেনল সেবন করলে নাকি শিশুদের মধ্যে অটিজমের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাঁর এই মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গেছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহলে।
গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ হিসেবে পরিচিত ওষুধটি কী?
টাইলেনল মূলত অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen) নামের একটি ওষুধের ব্র্যান্ড নাম। জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য বিশ্বজুড়ে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থায় আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিনের মতো অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধকে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। তাই চিকিৎসকরা টাইলেনলকেই এতদিন সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প বলে বিবেচনা করে এসেছেন।
ট্রাম্প কেন টাইলেনলের বিরুদ্ধে কথা বললেন?
হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প জানান, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) শীঘ্রই চিকিৎসকদের সতর্ক করবে যে গর্ভাবস্থায় টাইলেনল সেবনের ফলে অটিজমের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন যে, অনেক ওষুধ এবং ইনজেকশন অপ্রয়োজনীয়ভাবে শিশুদের ওপর চাপানো হয়, যা মোটেই ঠিক নয়। একই সাথে তিনি ভ্যাকসিন প্রদানের সময়সূচি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং হেপাটাইটিস-বি-এর টিকা জন্মের পরপরই না দিয়ে ১২ বছর বয়সে দেওয়ার কথা বলেন।
বিজ্ঞান এই বিষয়ে কী বলছে?
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। ২০২৪ সালে সুইডেনে ২০ লক্ষ শিশুর ওপর চালানো এক বড় গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যাসিটামিনোফেন এবং অটিজমের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে কিছু ছোট গবেষণা ও পর্যালোচনায় এই ওষুধ ব্যবহারের সঙ্গে নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারের একটি যোগসূত্র দেখা গেলেও, গবেষকরা নিজেরাই বলছেন যে এটি কেবল একটি সম্ভাব্য সম্পর্ক, কোনো কারণ নয়। আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং এর ফলে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে।
কো ম্পা নি ও চিকিৎসকদের বক্তব্য
টাইলেনল প্রস্তুতকারী সংস্থা এখনও দাবি করছে যে এই ওষুধটি গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ। তাদের যুক্তি, যদি জ্বর বা ব্যথার চিকিৎসা না করা হয়, তবে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই এর ঝুঁকি অনেক বেশি হতে পারে। চিকিৎসকরাও এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেন যে, গর্ভাবস্থায় যে কোনো ওষুধ কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সর্বনিম্ন ডোজ মেনে সেবন করা উচিত।