নতুন করে আরও ২ প্রাণ গেল, কলকাতা জুড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা কত? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

লাগাতার বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত কলকাতা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জল জমে দেখা দিয়েছে চরম বিপদ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জলমগ্ন শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা ১০ ছাড়িয়েছে। ভোর থেকে শহরে একাধিক মৃত্যুর খবর আসে, যা শহরের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। সর্বশেষ সংযোজন বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুরে নতুন করে আরও দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার।

সোমবার রাতভর অবিরাম বৃষ্টির কারণে শহরের রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমর সমান জলে ডুবে যায়। এই জমা জলেই লুকিয়ে ছিল মৃত্যুর ফাঁদ, যা থেকে রক্ষা পেল না কেউই। মঙ্গলবার ভোর থেকেই একের পর এক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করে। মৃতদের মধ্যে আছেন ফল বিক্রেতা, সাধারণ পথচারী এবং বাইক আরোহীরা। কেউ উন্মুক্ত তারের সংস্পর্শে এসে, আবার কেউ বিদ্যুতের খুঁটির সংস্পর্শে এসে প্রাণ হারিয়েছেন।

ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে দক্ষিণ কলকাতায়

ভোরের প্রথম ঘটনাটি ঘটে নেতাজিনগরে। সাইকেলে ফল বিক্রি করতে বেরিয়েছিলেন সত্তর বছর বয়সী বাবু কুণ্ডু। রাস্তায় জমা জলে সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়ে তিনি বিদ্যুতের খুঁটি ধরেছিলেন, আর তাতেই ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একই ভাবে কালিকাপুর মোড়ে মৃত্যু হয় বছর পঞ্চাশের আরও এক ব্যক্তির। বালিগঞ্জ প্লেস, ইকবালপুরের হোসেন সাহ রোড এবং বেনিয়াপুকুরেও বিদ্যুতের আঘাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুরে, যেখানে একসঙ্গে দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

সিইএসসি-কে সরাসরি দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী

এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সিইএসসি কলকাতায় শুধু ব্যবসা করছে, কিন্তু আধুনিকীকরণের কাজ করছে রাজস্থানে। এখানে কেন নয়?’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে চাকরি দেওয়ার জন্যও সিইএসসি-কে নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় দুটি সংগঠন কলকাতা হাইকোর্টে চিঠি দিয়ে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন, পুরসভা ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পুরোনো দুর্ঘটনা থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি।

অচল যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থবির শহর

মঙ্গলবার সকালে শহরের একাধিক জায়গায় এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে যোধপুর পার্কে ২৮৫ মিলিমিটার, কালীঘাটে ২৮০ মিলিমিটার এবং গড়িয়া কামদাহারিতে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলস্বরূপ শহরের প্রধান সড়কগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবাও প্রায় ভেঙে পড়ে, হাওড়া-শিয়ালদহ লাইনে বেশ কিছু লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয় এবং মেট্রোর কিছু অংশে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম শহরের এমন অবস্থার জন্য নদীর জোয়ারকে দায়ী করেন। তিনি জানান, গঙ্গার জোয়ার না কাটা পর্যন্ত জল সরানো সম্ভব নয়, কারণ নিকাশি ব্যবস্থা থেকে জল বেরিয়ে গেলেও তা আবার ফিরে আসছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *