ভারী সম্পর্কের চাপ নয়, এখন মন ভালো রাখার নতুন ওষুধ ‘মাইক্রো-ফ্রেন্ডশিপ’! কী এই নতুন ট্রেন্ড? – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
ডিজিটাল যুগে ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের ভিড়ে এখন সম্পর্ক এক নতুন বাঁক নিচ্ছে। গাঢ় বন্ধুত্ব বা গভীর সম্পর্কের চাপ নয়, বরং ক্ষণস্থায়ী, হালকা কিন্তু ইতিবাচক সম্পর্কই এখন মন ভালো রাখার নতুন মন্ত্র। এই নতুন প্রবণতার নাম ‘মাইক্রো-ফ্রেন্ডশিপ’ বা ‘অণু-বন্ধুত্ব’, যা জেন-জি এবং মিলেনিয়ালদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
আসলে কী এই মাইক্রো-ফ্রেন্ডশিপ?
সোজা কথায়, মাইক্রো-ফ্রেন্ডশিপ হলো সেই ধরনের সংক্ষিপ্ত এবং ইতিবাচক আলাপচারিতা, যা আমরা সেই সব মানুষের সঙ্গে করি, যাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনো গভীর সম্পর্ক নেই। এঁরা আমাদের খুব কাছের বন্ধু নন, কিন্তু অপরিচিতও নন। যেমন— অফিসের ক্যানটিনের কর্মী, পাড়ার খবরের কাগজ বিক্রেতা বা জিমে রোজ দেখা হওয়া সেই চেনা মুখ। এই সম্পর্কগুলো দায়বদ্ধতামুক্ত। এখানে ব্যক্তিগত জীবনের গভীরে যাওয়ার কোনো তাগিদ নেই, শুধু হালকা কথা বা একটি সৌজন্যের হাসিই যথেষ্ট।
কেন এই নতুন প্রবণতা?
সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। কোভিড-পরবর্তী যুগে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সংস্কৃতিতে মানুষের স্বাভাবিক মেলামেশা কমে গিয়েছে। ফলে, চা বিরতিতে সহকর্মীর সঙ্গে যে হালকা আড্ডা হতো, তার অভাব পূরণ করছে এই অণু-বন্ধুত্ব। অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ার লোকদেখানো এবং ক্লান্তিকর ভার্চুয়াল সম্পর্কের বিপরীতে মাইক্রো-ফ্রেন্ডশিপের মধ্যে এক ধরনের আন্তরিকতা এবং বাস্তবতা রয়েছে। মনোবিদরা মনে করেন, মানুষের সামাজিক সুস্থতার জন্য কেবল গভীর সম্পর্কই যথেষ্ট নয়, এই ধরনের হালকা সম্পর্কগুলোও সামাজিক একাত্মতা বোধের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
উপকারিতা কী?
এই সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি দৈনন্দিন জীবনে আনন্দের জোগান দেয়। এই ছোট ছোট আলাপচারিতা মস্তিষ্কে ডোপামিন এবং অক্সিটোসিনের মতো ‘ফিল-গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়, যা আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি এক ধরনের সামাজিক সংযুক্তির অনুভূতি তৈরি করে। যখন আমরা আমাদের পাড়া, অফিস বা রোজকার যাতায়াতের পথে একাধিক চেনা মুখের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করি, তখন নিজেকে আর বিচ্ছিন্ন বা একা মনে হয় না। এই ছোট ছোট সম্পর্কগুলোই আসলে আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের বড় সম্পর্কের ভিড়ে এই ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ।