মার্কিন আপাচে থেকে রুশ Ka-52, কেন যুদ্ধের ময়দানে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে অ্যাটাক হেলিকপ্টার? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

একসময় যুদ্ধের ময়দানে অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচিত ছিল অ্যাটাক হেলিকপ্টার। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিক যুদ্ধের কৌশল বদলে যাওয়ায় এখন এটি আর ততটা কার্যকর নয় বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাটাক হেলিকপ্টার ‘আপাচে’ও যুদ্ধের ময়দানে ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণিত হচ্ছে। তাহলে ভারত কেন এখনও এই হেলিকপ্টার কিনছে? প্রশ্ন উঠেছে সামরিক মহলে।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক যুদ্ধে এখন ট্যাংকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এখনকার যুদ্ধগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক ছোট হয় এবং সেখানে উন্নত ফাইটার জেট ও ড্রোন বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো তুলনামূলক সস্তা প্রযুক্তি দিয়েও এখন হেলিকপ্টারের কাজ করা সম্ভব। তাই হেলিকপ্টারের ভূমিকা এখন মূলত রसद সরবরাহ বা আহতদের স্থানান্তরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

পরিসংখ্যানও এই ধারণাকে সমর্থন করে। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২৮০টি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল এবং তাদের ক্ষয়ক্ষতি ছিল খুবই কম। কারণ তখন ইরাকের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ততটা শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে পরিস্থিতি বদলে যায়, ২৫০টি হেলিকপ্টারের মধ্যে ২৫-৩০টি ধ্বংস হয়ে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, সেখানে ২০০টির বেশি অ্যাটাক হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ৬০টির বেশি হারিয়েছে রাশিয়া। কাঁধ থেকে ছোড়া যায় এমন ছোট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই সহজে হেলিকপ্টারগুলিকে ধ্বংস করা হচ্ছে।

আধুনিক যুদ্ধ কৌশল ও ড্রোনের উত্থান

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাটাক হেলিকপ্টারের তুলনায় ড্রোন এখন অনেক বেশি কার্যকর। একটি অত্যাধুনিক AH-64E আপাচে হেলিকপ্টারের দাম প্রায় ৫২ মিলিয়ন ডলার, এবং প্রতি ঘণ্টায় এর খরচ প্রায় ৭,০০০ ডলার। সেখানে মার্কিন MQ-9 রিপার ড্রোনের দাম ৩০ মিলিয়ন ডলার এবং এর প্রতি ঘণ্টার খরচ প্রায় ৩,০০০ ডলার। তুরস্কের বাইরাকতার TB2 ড্রোনের দাম তো মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলার, এবং এর প্রতি ঘণ্টার খরচ মাত্র ১,০০০ ডলারের নিচে। ড্রোন চালানো শেখার খরচও অনেক কম। একটি আপাচে হেলিকপ্টার পাইলট হতে ২৪ মাস লাগলেও, ড্রোন অপারেটরের প্রশিক্ষণ এক বছরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব।

তবে, এর মানে এই নয় যে অ্যাটাক হেলিকপ্টারের গুরুত্ব সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে। দুর্গম পাহাড়ি বা জঙ্গলের মতো কঠিন ভূখণ্ডে হেলিকপ্টার এখনও অপরিহার্য। সংকীর্ণ উপত্যকায় গা ঢাকা দিয়ে হঠাৎ হামলা চালানো বা উদ্ধারকাজের মতো অনেক মিশন আছে, যা কোনো ড্রোন দিয়ে এখনও পর্যন্ত করা সম্ভব নয়। ভারতের মতো দেশের জন্য, যার সীমান্ত পাকিস্তান ও চীনের মতো দেশের সাথে দুর্গম অঞ্চলে বিস্তৃত, সেখানে আপাচে হেলিকপ্টার এখনও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *