কুমোরটুলির অলিগলিতে লুকিয়ে গ্রাম বাংলার জীবন! প্রতিমা বহন করেই নিজেদের জীবনের গান গায় এই মানুষগুলো – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

‘পালকি চলে, পালকি চলে…!’ সেই প্রাচীন পালকির যুগ এখন অতীত। তবে আজও একদল মানুষ কাঁধে করে বয়ে নিয়ে চলেন জীবনের ভার। শহরের বুকে উৎসবের আগমন ঘটলে তাদের দেখা মেলে। দুর্গাপূজার আগে কুমোরটুলির সরু গলিগুলোতে কান পাতলেই শোনা যায় তাদের জীবনের গল্প।

পুজোর আনন্দে শহরের অলিতে গলিতে যখন প্রতিমা সেজে ওঠে, তখন সেই উৎসবকে মণ্ডপে মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়ার মূল কারিগর এই মানুষগুলোই। দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে এসে তারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হন, যারা ‘কুমোরটুলির কুলি’ নামেই পরিচিত। জীবনকে সচল রাখতে এই প্রতিমা বাহকরাই দুর্গাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যান মণ্ডপ বা বনেদি বাড়ির অঙ্গনে।

মহালয়া থেকে ডাক পড়ে তাদের। প্রতিমার চোখ আঁকার পর থেকেই শুরু হয় তাদের ব্যস্ততা। একটি চারচাকার গাড়িতে প্রতিমা তুলে দেওয়ার জন্য একাধিক মানুষের সাহায্য দরকার হয়। মূলত, দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন, বাসন্তী-সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কাজ করতে আসেন তারা। রেললাইনের পাশেই চলে তাদের অস্থায়ী জীবনযাপন। রাস্তার ধারের ঝুপড়িতেই তারা পাতেন নিজেদের ছোট্ট সংসার।

প্রতিমা বহনের এই কঠিন কাজ করে যারা নিজেদের সুখ খুঁজে পান, তাদের মধ্যে আছেন সুশান্ত মণ্ডল, বসুদেব, আনন্দ সাঁপুই এবং পরিতোষ শিকারি। সুশান্ত মণ্ডল জানান, “সারা বছর চাষবাস বা দিনমজুরের কাজ করি। কিন্তু মহালয়া থেকে বিজয়া পর্যন্ত এই কাজ করার জন্য কলকাতা আসি। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত অবশ্য পরিবারের সঙ্গেই থাকি।” এই কষ্টের কাজ কেন করেন জানতে চাইলে আনন্দ সাঁপুই বলেন, “কষ্ট না করলে রোজগার হবে কী করে! বহু বছর এই কাজ করছি। যত বেশি কাজ, তত ভালো পুজো কাটে আমাদের।”

পরিতোষ শিকারি বলেন, “বাড়িতে থাকলেও এই সময়টা আমরা এই কাজ করেই আনন্দ পাই। রেললাইনের কাছে রান্না করে খেতে হয়, কষ্ট হয়। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে এসেও এই কাজটা করতে চাই।” এই মানুষগুলো তাদের শক্তসমর্থ শরীর দিয়ে শুধু প্রতিমাই বহন করে না, বরং প্রতি মুহূর্তে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জীবনের গান গেয়ে চলে। তাদের এই কঠোর পরিশ্রমই শহরের পূজাকে সম্পূর্ণতা দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *