২৪ ঘণ্টায় কলকাতা পুরসভা কীভাবে জল-যন্ত্রণার থেকে শহরকে মুক্ত করল? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

সোমবার রাত থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টির পর যেন এক দুঃস্বপ্ন নেমে এসেছিল কলকাতায়। কয়েক ঘণ্টার টানা বর্ষণে কার্যত ডুবে গিয়েছিল উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতা। সল্টলেকসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাও ছিল জলমগ্ন। মঙ্গলবার মানিকতলা থেকে মুদিয়ালি, সব জায়গায় ছিল কোমর সমান জল। রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, অটো— সবই ছিল জলের নিচে। জল জমে যাওয়ায় ব্যাহত হয়েছিল ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবাও। বিগত কয়েক বছরে এমন টানা বৃষ্টির সাক্ষী থাকেনি শহর কলকাতা। এই দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন।

মঙ্গলবার দিনভর পরিস্থিতি সামাল দিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করেছেন। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত পুরসভায় পারিষদ ও আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র। সেখান থেকেই গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। জলযন্ত্রণা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছবিটা পুরোপুরি বদলে গেল। বুধবার ঝলমলে রোদ উঠল এবং শহরের বেশিরভাগ এলাকা থেকে জল নেমে গেল। প্রশ্ন জাগে, ২৪ ঘণ্টায় কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করল কলকাতা পুরসভা?

বুধবার শহরের কিছু অংশের চিত্র

কাশীবোস লেন

সোমবার কাশীবোসের পুজো মণ্ডপ কার্যত দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। স্টল, ব্যানার সবকিছুই উল্টে গিয়েছিল। রাস্তা ছিল হাঁটু জলে ডুবে। তবে সোমবার রাত থেকেই জল নামতে থাকে এবং বুধবার সকালে সেই জায়গা আগের চেহারায় ফিরে আসে। দেখে বোঝার উপায় নেই, মাত্র একদিন আগেই এখানে বড় দুর্যোগ হয়ে গেছে।

মানিকতলা

একাধিক পাড়া থেকে মানিকতলা মোড় পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব ছিল না। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও কোমর সমান জল। তবে মঙ্গলবার রাত থেকেই জল নামতে থাকে। বুধবার সকালে রাস্তা একেবারে খটখটে শুকনো। ওই এলাকার পুজো মণ্ডপগুলোতে ফের নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। বাজারেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ।

দক্ষিণ কলকাতার চিত্র

দক্ষিণের বহু রাস্তা এখন একেবারে পরিষ্কার। মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির কারণে মেট্রো পরিষেবাও বন্ধ ছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, মহানায়ক উত্তম কুমার এবং রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনের মধ্যে জল জমে যাওয়ায় মেট্রো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যায়। বুধবার সকাল থেকে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলছে। ফলে অফিসযাত্রীদের আর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।

২৪ ঘণ্টায় কলকাতা পুরসভা কীভাবে জল-যন্ত্রণার থেকে শহরকে মুক্ত করল?

মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, এই কাজ একদিনে হয়নি। এর জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, তার আমলে নিকাশি খাতে সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ড্রেনেজ লাইন, পাম্পিং স্টেশন তৈরি, পুরনো পাম্প বদল, লোকবল বৃদ্ধি— এসবই এই সাফল্যের কারণ। তার মতে, এই গোটা ঘটনার সুপারহিরো মুখ্যমন্ত্রী এবং মেয়র। তবে এখনও ঠনঠনিয়া থেকে বালিগঞ্জ, গড়িয়া ও নিউ গড়িয়ার মতো কিছু বিক্ষিপ্ত অংশে জল জমে রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *