যোগীরাজ্যে নতুন দিগন্ত! কেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় চোখ রাখছে গোটা বিশ্ব? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

উত্তরপ্রদেশকে বাণিজ্য ও ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ইউপি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড শো (UPITS) ২০২৫-এর তৃতীয় সংস্করণ। গ্রেটার নয়ডার ইন্ডিয়া এক্সপো মার্টে আয়োজিত এই মেগা ইভেন্ট চলবে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন।

এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তরপ্রদেশের শিল্প, কৃষি, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির শক্তি প্রদর্শন করা হবে। এবারের মেলায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশকে বিশ্বের সামনে একটি শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই শোয়ের মাধ্যমে রাজ্যের তরুণ, স্টার্টআপ এবং বিদেশি অতিথিরা একটি আধুনিক এবং ভবিষ্যতের উপযোগী মঞ্চ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিন বছরে দ্বিগুণ বড় হয়েছে শো

২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু প্রথম ইউপি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড শোয়ের উদ্বোধন করেছিলেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে উদ্বোধন করেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। প্রথম সংস্করণে যেখানে ১,৯১৪ জন প্রদর্শক এবং ৪০০ বিদেশি ক্রেতা উপস্থিত ছিলেন, পরের বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২,১২২ প্রদর্শক, ৩৫০ বিদেশি ক্রেতা এবং ৫ লক্ষ ভিজিটর। এবার তৃতীয় সংস্করণে ২,৫০০-এর বেশি প্রদর্শক, ৫০০ বিদেশি ক্রেতা এবং ৫ লক্ষেরও বেশি ভিজিটর আশা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই শো থেকে ২,২০০ কোটি টাকার রপ্তানি অর্ডার এবং ৪০ কোটি টাকার সরাসরি বিক্রি হয়েছে, যা এই মেলাকে বিনিয়োগের একটি বড় কেন্দ্র হিসেবে প্রমাণ করে।

ওডিএপি প্যাভিলিয়ন: প্রতিটি জেলার বিশেষত্ব

এবারের ট্রেড শোতে ‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান প্রোডাক্ট (ODOP)’ প্যাভিলিয়ন স্থাপন করা হবে, যেখানে উত্তরপ্রদেশের প্রতিটি জেলার বিশেষ পণ্য ৩৪৩টি স্টলে প্রদর্শিত হবে। এখানে দেখা যাবে ভাদোহীর কার্পেট, মোরাদাবাদের ধাতুশিল্প, ফিরোজাবাদের কাঁচের সামগ্রী এবং সাহারানপুরের কাঠের কাজ। এই প্যাভিলিয়নগুলি স্থানীয় পণ্যকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দেবে এবং ডিজাইনার, স্টার্টআপ ও বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করবে।

অংশীদার রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া

এই বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশীদার রাষ্ট্র হিসেবে যোগ দিচ্ছে রাশিয়া। ২৬ সেপ্টেম্বর ‘রাশিয়া-ইন্ডিয়া বিজনেস ডায়ালগ’-এর আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দুই দেশের ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাবিদরা একসঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তির নতুন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। এটি উত্তরপ্রদেশের ব্যবসায়ী এবং শিল্পের জন্য একটি বিশাল সুযোগ তৈরি করতে পারে।

এআই এবং প্রযুক্তির লাইভ শো

আইটি এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগ একটি বিশেষ প্যাভিলিয়নে ২০০ বর্গমিটার জায়গা সংরক্ষণ করেছে, যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) লাইভ দেখানো হবে। কার্ভড এলইডি স্ক্রিন এবং স্মার্ট ডিসপ্লে-এর মতো আধুনিক সুবিধা থাকবে এই প্যাভিলিয়নে। এটি প্রমাণ করবে যে যোগী সরকার কীভাবে উত্তরপ্রদেশকে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

স্বাদ উত্তরপ্রদেশ: এক ছাদের নিচে রাজ্যের স্বাদ

গেট নম্বর ৩ থেকে হল নম্বর ৭ পর্যন্ত “স্বাদ উত্তরপ্রদেশ” নামে একটি বিশেষ বিভাগ থাকবে। এখানে ২৫টি খাবারের স্টল বসানো হবে, যেখানে মুরাদাবাদীর ডাল, বারাণসীর লস্যি এবং পান, আগ্রার পেঠা, মথুরার পেঁড়া এবং অন্যান্য জনপ্রিয় খাবার উপভোগ করা যাবে। এই বিভাগটি স্থানীয় খাদ্য বিক্রেতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

সিএম যুব প্যাভিলিয়ন: তরুণদের জন্য বিশাল সুযোগ

হল নম্বর ১৮এ-তে ‘সিএম যুব’ প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি উদ্ভাবনী স্টল থাকবে। এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি, প্রযুক্তি-ভিত্তিক ব্যবসা, এগ্রিটেক, হেলথটেক এবং স্টার্টআপ মডেল তুলে ধরা হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করা হবে, যেখানে ছাত্র এবং যুবকরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ব্যাংক এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবেন।

সংস্কৃতির রঙে রাঙানো বাণিজ্য মেলা

ট্রেড শো কেবল বাণিজ্য নিয়েই নয়, উত্তরপ্রদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেরও প্রতিফলন ঘটানো হবে এখানে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দর্শকরা ভোজপুরী, অবধী, বুন্দেলি এবং থারু লোকনৃত্য, সুফি গান এবং কত্থক উপভোগ করতে পারবেন। জনপ্রিয় শিল্পী দীনেশ লাল নিরহুয়া, মালিনী অবস্থী এবং প্রতিভা সিং বাঘেল অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *