দুর্গোৎসব না বিয়ার উৎসব? জার্মানির বাভারিয়ায় মিলেমিশে একাকার – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

তিথি না থাকলেও আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ দেখলেই বাঙালির মনে পুজো-পুজো সুর বাজে। বাংলায় যেমন আশ্বিন পুজোর মাস, ইউরোপের জার্মানিতে তখন শুরু হয় এক অন্য উৎসব—নাম তার ‘অক্টোবরফেস্ট’। আর এ বছর সেই উৎসব দুর্গাপুজোর ঠিক আগেই শুরু হয়ে দুই প্রান্তের আনন্দকে যেন মিলিয়ে দিয়েছে।

অনেকেই হয়তো জানেন না, পৃথিবীর আর এক প্রান্তের মানুষ এই অক্টোবরেই মাতেন বিপুল এক হুল্লোড়ে। বাংলায় যখন শিউলির গন্ধ আর কাশের শুদ্ধতা, জার্মানিতে তখন এক অন্য মাদকতার স্বাদ।

কোথায় হচ্ছে আসল ‘অক্টোবরফেস্ট’

বাঙালির কাছে ‘অক্টোবরফেস্ট’ দুর্গা পুজোরই আরেক নাম হলেও, আসল উৎসবটি হয় জার্মানির বাভারিয়ায়। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহান্ত পর্যন্ত চলে এই বিশাল আয়োজন। যেখানে বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাস রাম-রাজত্বে ফেরে, সেখানে জার্মানির এই উৎসব শুরু হয়েছিল প্রায় দুশো বছর আগে। বর্তমানে বাভারিয়ার রাজধানী মিউনিখ এখন সেই উৎসবে মেতেছে। বিরাট বিরাট বিয়ার মগ হাতে তাঁরা বলছেন ‘চিয়ার্স’ থুড়ি উল্লাস।

কাশী বোস লেনের অষ্টমীর রাত মিউনিখে

বাঙালি যেমন পুজো মানেই ঠাকুর দেখা, আড্ডা আর হুল্লোড়, জার্মানিতে এই উৎসবের মানেও তাই। ‘অক্টোবরফেস্ট’ মানে প্রেতজেল (বিশেষ এক জার্মান স্ন্যাক) আর বিয়ার মাগ হাতে দিন-রাত হুল্লোড়, আড্ডা, গালগল্পের এক অন্য ঐতিহ্য। জার্মানিতে বসেছে বিশাল মেলা। নাগরদোলা থেকে শুরু করে হাজারও রকমের রাইড রয়েছে।

এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হলো বিয়ার পানের জন্য তৈরি হওয়া বিরাট তাঁবুগুলো। সেখানে একসঙ্গে হাজার খানেকের বেশি মানুষ বসতে পারে। পরিবেশন করা হয় এক লিটারের জগের আকারের মগে বিয়ার। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ লিটার বিয়ার বিক্রি হয় কেবল এই উৎসবেই। তবে তাঁবুতে ঢুকতে গেলে দরকার আগেভাগে করা রিজার্ভেশন। ভিড় এতটাই যে মনে হবে যেন কাশী বোস লেনের পুজোর অষ্টমীর রাত! মিউনিখের ট্রাম বা মেট্রো স্টেশনের সিঁড়িতে পা ফেলার জায়গা থাকে না, এস্কেলেটরগুলোতে সারি সারি মানুষ। পরিস্থিতি এমন হয় যে, কলকাতার সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন না মিউনিখ, তা বুঝে ওঠা কঠিন।

পোশাক আর ঐতিহ্যের মিশেল

অনেকে এটিকে শুধু বিয়ার ফেস্টিভ্যাল বললেও ভুল হবে। বিয়ার পান করা নিঃসন্দেহে এর অন্যতম অংশ, কিন্তু এর বাইরেও দেখার আছে অনেক কিছু। এটি আসলে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক মেলবন্ধন। গানবাজনা, বিপুল আকারের বিয়ার মাগ হাতে টেবিলের উপর নাচ দেখে বাঙালির ঢাকের তালে তুমুল নাচের মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

জার্মানিতে উৎসবের জন্য সবাই পরেছেন সেই প্রাচীন এথনিক পোশাক। বাঙালি যেমন পুজো মানেই শাড়ি-ধুতি, জার্মান মেয়েদের পোশাকের নাম ‘ড্রিনডেল’। ছেলেদের পোশাকের নাম ‘লেডারহোসে’। এটি মূলত চামড়া দিয়ে তৈরি হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট, সঙ্গে শার্ট। মনে হবে যেন সবাই দল বেঁধে শহরে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্শ্ববর্তী অস্ট্রিয়া, প্রাগ—দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকের ঢল নেমেছে মিউনিখে।

যেভাবে শুরু হয় এই উৎসব

‘অক্টোবরফেস্ট’ শুরু হয় ১৮১০ সালে। বাভারিয়ার যুবরাজ লুডভিগ এবং রাজকুমারী থেরেসার বিয়ের বিশাল জমায়েত থেকেই এর সূত্রপাত। মিউনিখের বাসিন্দাদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং উৎসব সফল হওয়ার পর তা বার্ষিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি মেলার রূপ নেয়, যা এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বিয়ার উৎসবে পরিণত হয়েছে। এর জনপ্রিয়তার কারণে চিন, কানাডা, ব্রাজিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরেও এই উৎসব পালিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *