কোচবিহারে আজও রাজত্ব করছে ১৮০ বছরের পুরোনো এক রহস্য! কেন এই দুর্গা মায়ের রূপ টকটকে লাল – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

রাজ্যজুড়ে যখন দুর্গাপূজা মানেই থিমের জাঁকজমক, আলোর রোশনাই আর ডিজে-র উন্মাদনা, তখন এক ভিন্ন ছবি দেখা যায় কোচবিহারের দিনহাটা-১ ব্লকের ভেটাগুড়ি চৌপথি বারোয়ারি দুর্গা মন্দিরে। এখানে নেই চাঁদার চাপ, নেই আলোর ঝলকানি, বা থিমের দেখনদারি। এই পুজোর মূল আকর্ষণ শুধু ঐতিহ্য, বিশ্বাস আর এক সুপ্রাচীন নিয়ম। প্রায় দুই শতাব্দী পেরিয়েও রাজ আমলের রীতিতে আজও স্বমহিমায় পূজিত হন এই ‘লাল দুর্গা’

স্থানীয়দের কাছে এই দেবীর রূপই এক বিরাট রহস্যের। দেবী এখানে সেজে ওঠেন টকটকে লাল রঙে। বিশ্বাস করা হয়, এই লাল রূপ শক্তি, সাহস এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।

রাজকীয় ইতিহাস, অটুট পরম্পরা

এই পুজোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে। জনশ্রুতি আছে, ১৭৮৩ থেকে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা যখন ভেটাগুড়িতে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন, তখনই বড়োদেবীর আদলে এই লাল দুর্গার আরাধনা শুরু হয়েছিল। রাজ আমলে পুজো যেমন নিয়মে হতো, আজও সেই ধারা একচুলও বদলায়নি।

পঞ্চমী থেকে দশমী—প্রতিদিন দুজন দেউরি (পুরোহিত) মন্দিরে থাকেন। এই দায়িত্বও চলে আসছে বংশপরম্পরায়। প্রবীণ দেউরি হরিপদ দেউরি বলেন, “আমরা কয়েক প্রজন্ম ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। রাজ আমলে যেভাবে পুজো হতো, আজও ঠিক সেভাবেই মায়ের আরাধনা করি।”

চাঁদা নয়, ভক্তের দানই ভরসা

অন্যান্য পুজোর মতো এখানে চাঁদা তুলে জাঁকজমক করা হয় না। এই পুজোর যাবতীয় আয়োজন চলে শুধু ভক্তদের দেওয়া দানে। পুজো কমিটির সম্পাদক শিবানন্দ রায় জানান, এই পুজোর নির্দিষ্ট শুরুর তারিখ জানা না গেলেও শোনা যায়, রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠার পরপরই এই বারোয়ারি পুজোর সূচনা হয়েছিল। ভক্তদের কথায়, এই পুজো শুধু উৎসব নয়, একটি জীবন্ত ঐতিহ্য

বিশেষ রীতিনীতি, দশমীতে হয় না বিসর্জন

ভেটাগুড়ির এই পুজো তার আচার-অনুষ্ঠানের জন্যও বিশেষ পরিচিত। এখানে দশমীর বদলে প্রতিমা বিসর্জন হয় একাদশীতে। অষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুমড়ো বলি’, যা অসুর বিনাশের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। নবমীর দিন গ্রামের মানুষজন সমবেতভাবে মিলেমিশে তৈরি করেন বিশেষ ভোগ।

সময় বদলেছে, প্রযুক্তি বদলেছে, কিন্তু ভেটাগুড়ির লাল দুর্গার পুজো আজও তার আদি ও রাজকীয় রূপে অক্ষুণ্ন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্থানীয় মানুষ, দেউরি এবং শিল্পীরা মিলে এই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *