বিনিয়োগকারীরা কেন SIP-এর পরিবর্তে STP-এর দিকে ঝুঁকছেন? ধনী হওয়ার পথ জেনে নিন! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

বর্তমান অস্থির বাজারে, বিনিয়োগকারীরা এখন সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIP) থেকে মুখ ঘুরিয়ে সিস্টেমেটিক ট্রান্সফার প্ল্যানের (STP) দিকে ঝুঁকছেন। এটি এমন এক কৌশল, যা শেয়ারবাজারের ঘন ঘন ওঠা-নামার ঝুঁকি কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি রিটার্নের সম্ভাবনাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের বাজার অস্থিরতার কারণে এই ধরনের সুচিন্তিত বিনিয়োগ কৌশল আরও বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কিন্তু কেন হঠাৎ এই পরিবর্তন?

STP আসলে কী? SIP-এর থেকে কোথায় আলাদা?

SIP-এর মতো STP-ও একটি সুশৃঙ্খল বিনিয়োগ পদ্ধতি, যা শৃঙ্খলাপরায়ণভাবে অর্থ সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে। তবে মূল পার্থক্যটি হলো— SIP-তে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সরাসরি মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে রুপি কস্ট এভারেজিং (Rupee Cost Averaging) এবং কম্পাউন্ডিং-এর সুবিধা মেলে।

অন্যদিকে, STP একটি এককালীন বিনিয়োগ দিয়ে শুরু হয়। আপনার বড় অঙ্কের টাকা প্রথমে একটি নিরাপদ ডেব্ট বা লিকুইড ফান্ডে রাখা হয়। এরপর, সেই ফান্ড থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়মিত বিরতিতে (মাসিক বা ত্রৈমাসিক) ধীরে ধীরে ইকুইটি ফান্ডে স্থানান্তর করা হয়।

এই কৌশলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বাজারের নিম্নমুখী সময়ে এটি বেশি সংখ্যক ইউনিট কেনার সুযোগ দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, STP-এর মাধ্যমে ১.২% পর্যন্ত অতিরিক্ত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব হতে পারে। নিয়মিত ছোট ছোট সঞ্চয়ের জন্য SIP সেরা হলেও, যদি আপনার কাছে একবারে বড় অঙ্কের টাকা থাকে, তবে STP সেই অর্থকে সুরক্ষিত রেখে বৃদ্ধি করার জন্য অধিক শ্রেয়।

কার জন্য STP সবচেয়ে উপযুক্ত?

যাঁদের কাছে এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত, তাঁদের জন্য STP সবচেয়ে ভালো বিকল্প। ধরুন, আপনি অবসরকালীন তহবিল বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তবে STP একটি চমৎকার সমাধান দিতে পারে।

এই প্ল্যানটি কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে চান, তবে সেই টাকাটি প্রথমে স্থিতিশীল রিটার্নের জন্য ডেব্ট ফান্ডে রেখে প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা করে ইকুইটিতে স্থানান্তর করলে, তা বাজারের বড় অস্থিরতা থেকে আপনার অর্থকে রক্ষা করবে এবং ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।

STP-এর মূল সুবিধাগুলি কী কী?

১. বাজারের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা: এককালীন অর্থ সুরক্ষিত ডেব্ট ফান্ডে থাকায় এবং ধীরে ধীরে তা ইকুইটিতে যাওয়ায়, বাজারের অনিশ্চয়তা থেকে বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে।

২. উচ্চতর রিটার্ন: রুপি কস্ট এভারেজিংয়ের সুবিধা পাওয়ায় STP ভালো রিটার্ন দিতে পারে।

৩. কম কর প্রভাব: এই স্থানান্তরের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভের কর প্রযোজ্য হয়, যা করের বোঝাকে কিছুটা হালকা করে।

৪. শৃঙ্খলাপরায়ণতা: এটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ২০২৫ সালে আর্বিট্রেজ ফান্ডের মাধ্যমে STP শুরু করলে ১-২% অতিরিক্ত রিটার্নও সম্ভব।

STP-তে বিনিয়োগের আগে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন?

STP-তে বিনিয়োগ করার আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরি:

  • সোর্স ফান্ড নির্বাচন: যে ফান্ড থেকে টাকা স্থানান্তরিত হবে (ডেব্ট বা লিকুইড ফান্ড), তা যেন স্থিতিশীল এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
  • টার্গেট ফান্ড নির্বাচন: যে ফান্ডে টাকা যাবে (ইকুইটি ফান্ড), সেটি আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং আর্থিক লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
  • সময়কাল ও পরিমাণ: স্থানান্তরের সময়সীমা এবং টাকার পরিমাণ আপনার আর্থিক পরিকল্পনা অনুসারে নির্ধারণ করুন।
  • দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য: STP দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত, তাই স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য থাকলে এই প্ল্যান এড়িয়ে চলুন।
  • পর্যবেক্ষণ: ফান্ডের কার্যকারিতা নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন আনুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *