ভারতের কোটি কোটি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো চা, তবে এর বিশেষত্ব বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে স্বতন্ত্র—মূলত ‘দুধ-চা’র প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে। অদ্ভুত হলেও সত্যি, চায়ের এমন ব্যাপক দুধের ব্যবহার প্রায় একচেটিয়াভাবে ভারতেই দেখা যায়। এর নেপথ্যে লুকিয়ে আছে এক জটিল ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক কারণের সমাহার।

ভারতীয় চা সাধারণত বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চায়ের চেয়ে অনেক বেশি কড়া বা গাঢ় হয়। এর উচ্চ ট্যানিনের পরিমাণ পানীয়টিতে তীব্র কষাটে ভাব সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অতিরিক্ত কড়া স্বাদকে কোমল ও মিষ্টি করে তোলার জন্যই মূলত দুধ যোগ করা শুরু হয়। দুধের ফ্যাট এবং প্রোটিন এই অ্যাস্ট্রিনজেন্সি বা কষাটে ভাব কমিয়ে পানীয়টিকে সুস্বাদু করে তোলে।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে যখন সাধারণ মানুষের মধ্যে চা জনপ্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয়, তখন শ্রমিকদের সরবরাহ করা নিম্নমানের বা কড়া চায়ের স্বাদ ও মান উন্নত করার জন্য দুধ ও চিনি মেশানোর প্রচলন শুরু হয়। এই অভ্যাসটিই ক্রমশ ভারতীয় সংস্কৃতিতে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। অন্যদিকে, ভারতে ঐতিহাসিকভাবেই দুধের সহজলভ্যতা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত প্রচলিত বিশ্বাসও ‘দুধ-চা’র জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কড়া চায়ের স্বাদ নরম করা, ঐতিহ্যের প্রতি অনুরাগ এবং পুষ্টির ধারণা—এই সবকিছু মিলিয়েই ভারতে দুধ-চা আজ এক অনন্য পানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।