হাসপাতালের ‘দালাল চক্র’ চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা, নির্দেশ রাজ্যে – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
পিজি হাসপাতালে নাবালিকা ধর্ষণ-কাণ্ডের পর এবার রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের ‘দালাল চক্র’ নির্মূলে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিল স্বাস্থ্যদপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া অবস্থানের পরই এই বার্তা। পুলিশের ছাড়পত্র ছাড়া বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ বন্ধ করার পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দালাল চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শুক্রবারই মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতালকে ফোন করে নির্দেশ জানানো হয়েছে।
মূলত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে দালালদের দৌরাত্ম্য সব থেকে বেশি। দেখা যায়, তারা রোগীর আত্মীয় সেজে হাসপাতালে ঘুরে বেড়ায়, ফলে তাদের আসল উদ্দেশ্য আঁচ করা কঠিন হয়। এর পেছনে হাসপাতালেরই এক শ্রেণির কর্মীর সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ থেকে রাজ্যের অন্যান্য বড় হাসপাতালের চিত্র প্রায় এক।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের কিছু কর্মী ও চিকিৎসকের অসহযোগিতার সুযোগ নেয় দালালরা। তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডে তাদের অবাধ বিচরণ। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তাদের এমন ঘরোয়া সম্পর্ক, যা দেখে মনে হতে পারে তারা হাসপাতালেরই স্টাফ। এভাবেই তারা দিনের পর দিন রোগীদের ফাঁদে ফেলছে।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি তাপস ঘোষ জানিয়েছেন, “অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করা হয়। হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে, তাদের আরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”
দালালের খপ্পর থেকে রেহাই পাওয়া রূপা মণ্ডল নামে এক রোগীর আত্মীয় জানান, “ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে একজন এসে আগবাড়িয়ে পরিচয় করে। সে সরাসরি নার্সিংহোমে যেতে বলেনি, তবে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে, সরকারি হাসপাতালের চেয়ে একটি নার্সিংহোমে অনেক ভালো চিকিৎসা হয়। আগে থেকে দালালদের সম্পর্কে জানা ছিল বলে আমি গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা বহু সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের ফাঁদে পা দেন।”
আরেক রোগীর আত্মীয় অর্পণ বারুইয়ের দাবি, “দালালরা সবসময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যত কড়াকড়ি শুধু আমাদের জন্য।”
তবে স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলছেন, “দালালরা যাতে হাসপাতালে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরাই জানেন কে দালাল। তাঁরা সক্রিয় হলেই এই চক্র বন্ধ হবে।” ওই আধিকারিকের দাবি, “এক সময় দালালরা হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করত। এখন ততটা দাপট না থাকলেও নির্মূল করা যায়নি।” যদিও অনেক রোগীর আত্মীয়ের অভিযোগ, দালালকে টাকা দিলে সহজে বেড এবং অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা দ্রুত হয়ে যায়। তাঁদের মতে, হাসপাতালের কর্মীরা সহযোগিতা করলেই দালাল চক্রের দাপট অনেক কমবে।