ওয়েটিং লিস্টের ঝক্কি এড়াতে আপগ্রেডেশনই অস্ত্র রেলের – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

যাত্রার দু’মাস আগেও দূরপাল্লার ট্রেনের স্লিপার ক্লাসে অপেক্ষমান টিকিটের সংখ্যা ২০০ পেরিয়ে যাচ্ছে! কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদি সরকার যেখানে প্রত্যেক রেলযাত্রীকে ‘কনফার্মড’ টিকিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানে সাধারণ মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনের সংখ্যা না বাড়িয়ে ওয়েটিং লিস্ট শূন্যে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া আপাতত বিশ বাঁও জলে। ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে এই তালিকা, যা তথাকথিত ‘অফ সিজনে’ও যাত্রীদের স্বস্তি দিচ্ছে না।

এহেন পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার রেলমন্ত্রক টিকিটের ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ পদ্ধতিকেই হাতিয়ার করছে। এই পদ্ধতিতে কনফার্মড টিকিট থাকা যাত্রীরা কোনো অতিরিক্ত মূল্য ছাড়াই এক ধাপ অপেক্ষাকৃত উঁচু শ্রেণিতে ‘আপগ্রেড’ হয়ে যান। এর ফলে অপেক্ষমান যাত্রীরা নিশ্চিত টিকিট পাওয়ার সুযোগ পান। শর্ত কেবল একটাই, টিকিট বুকিংয়ের সময় যাত্রীকে এই ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ পদ্ধতিতে সম্মতি জানাতে হয়।

একটি আরটিআই-এর জবাবে দেখা যাচ্ছে, বিগত চারটি আর্থিক বছরে রেল এভাবে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৯ জন যাত্রীর ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ করেছে। তবে এতেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে বলে মনে করছেন না অনেকে। কারণ, স্লিপার শ্রেণিতেও ‘বুকিং উইন্ডো’ খোলার মাত্র দু’মিনিটের মধ্যেই ওয়েটিং লিস্ট ২০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ঠিক কী কারণে এই পরিস্থিতি? বর্তমানে দূরপাল্লার ট্রেনে সংরক্ষিত শ্রেণিতে সর্বোচ্চ দু’মাস আগে টিকিট বুকিং করা যায়। যেমন, আগামী ২৪ ডিসেম্বর দার্জিলিং মেলের জন্য ২৫ অক্টোবর বুকিং শুরু হলে, সকাল ৮টায় ই-টিকিট বুকিং শুরুর মাত্র দু’মিনিটের মধ্যে একজন যাত্রী যখন স্লিপার ক্লাসে তিনটি টিকিট বুকিং করছেন, তখন তাঁর ওয়েটিং লিস্ট দেখাচ্ছে যথাক্রমে ২০৫, ২০৬ এবং ২০৭। দু’মিনিটের মধ্যে ওয়েটিং লিস্ট কোন সমীকরণে ২০০ পেরিয়ে যেতে পারে, সেই অঙ্ক মেলাতে পারছেন না সাধারণ যাত্রীরা। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই ডিজিটাল দালালরাজের আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আত্মনির্ভর ভারতে’ সাধারণ রেলযাত্রীরা কি তবে দালালদের শিকার হচ্ছেন? এই প্রশ্নই এখন জোরালো।

রেল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রেল সূত্রের ব্যাখ্যা, ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ পদ্ধতির মাধ্যমে আরও বেশি যাত্রীকে কনফার্মড টিকিট পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই পদ্ধতিতে থার্ড এসি থেকে সেকেন্ড এসি, সেকেন্ড এসি থেকে ফার্স্ট এসি, অথবা স্লিপার থেকে থার্ড এসিতে নিশ্চিত আসন থাকা যাত্রীদের এক ধাপ উঁচু শ্রেণিতে ‘আপগ্রেড’ করা হয়। যাত্রী অনিচ্ছুক হলে অবশ্য রেল কর্তৃপক্ষ এই আপগ্রেড করে না। তবে মূল প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে: এত বিপুল সংখ্যক টিকিট এত দ্রুত কীভাবে বুক হচ্ছে এবং ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ কি কেবল সাময়িক স্বস্তি, নাকি সমস্যার মূলে আঘাত করার কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *