কী ঘটতে চলেছে বাংলায়! ভোট কি ২-৩ দফায়? কমিশনকে ‘চাপ’ দিচ্ছে গেরুয়া শিবির, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তৃণমূলের – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
উৎসবের মরশুম শেষ হতে না হতেই বঙ্গ রাজনীতিতে নির্বাচনী পারদ চড়তে শুরু করেছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যেই রাজ্যের মানুষ পরবর্তী সরকার গঠনে তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। কিন্তু তার আগে ভোটার তালিকার ‘ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) নিয়ে চরম রাজনৈতিক বিরোধ শুরু হয়েছে।
আজ, সোমবার বিকেলে জাতীয় নির্বাচন কমিশন দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছে। সূত্রের খবর, সেখানে দেশের ১০ রাজ্যে এসআইআর-এর বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হতে পারে, সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নামও থাকার সম্ভাবনা। বিজেপি নেতারা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাংলায় এসআইআর-এর পরেই ভোট হবে। স্বশাসিত কমিশনের বিষয়ে কীভাবে বিজেপি নিশ্চিত হয়ে বিবৃতি দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। সেই অঙ্ক মিলে যাওয়ার পরই শাসক দলের অভিযোগের তীব্রতা বেড়েছে—তারা দাবি করছে, কমিশনকে প্রভাবিত করে বাংলায় ভোট করাতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
তবে শুধু এসআইআর নয়, এবার সামনে আসছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—বাংলায় ক’দফায় ভোট হবে?
সূত্রের দাবি, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব আগামী বিধানসভা নির্বাচন ২ থেকে ৩ দফায় শেষ করতে চাইছে। দলের সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় রবিবার এই নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘৭-৮ দফায় ভোট হলে তৃণমূলের সুবিধা। কারণ, ওরা যত বেশি সময় পাবে, তত বেশি ভোট ম্যানেজারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করবে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং থেকে শুরু করে কাকদ্বীপে পর্যন্ত ভুয়ো ভোট দিয়ে যাত্রা শেষ করে এই দুষ্কৃতীরা। তিন দফায় ভোট শেষ হলে এই অপকর্ম করা যাবে না।’
যদিও লকেট চট্টোপাধ্যায়ের এই অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক শীর্ষ পদাধিকারী। তাঁর বক্তব্য, ‘বিজেপি অতীতেও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসকে চাপ দিয়ে ভোট করাতে গিয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ বিজেপির এই দখলদারির রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছে। ওদের সঙ্গে জনতা বা সংগঠন—কিছুই নেই। তাই ওরা এসআইআর বা কম দফায় ভোট করানো সহ নানা ছুতো খুঁজছে।’
এ প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ক’দফায় বাংলায় ভোট হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভোটের আগে-পরে কত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যাবে, সেই সমস্ত বিষয় বিশ্লেষণ করে দফা নির্ধারণ হবে। তবে ওই কর্তা সাফ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ৩ দফায় ভোট করানো যেতেই পারে।
পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছে কারণ পড়শি রাজ্য বিহারে ২৪৩টি আসনের জন্য আগামী মাসে ৬ ও ১১ নভেম্বর দুই দফায় ভোটের নির্ঘণ্ট জারি করেছে কমিশন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলায় ৮ দফায় ভোট হয়েছিল এবং সেই নির্বাচনে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে। এরপর ২০১৬ ও ২০২১ সালের ভোট হয়েছিল ৬ দফায় এবং প্রতিবারই জনতার রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই যায়। তাই এবার কি ‘দফা’ নিয়েই অশনিসংকেত দেখছে বিজেপি—রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।