SIR ঘোষণার আগেই ‘খেলা’! ২ শতাধিক অফিসার বদল, তড়িঘড়ি কেন এই সিদ্ধান্ত? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
ভোট আসে-যায়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক ‘খেলা’ যেন থামতেই চায় না। এবার সেই ‘খেলা’ আরও জমে উঠল ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ প্রক্রিয়ার (SIR) ঘোষণার ঠিক আগে।
কী এমন ঘটল?
নির্বাচন কমিশন (EC) দ্বারা রাজ্যগুলোতে ভোটার তালিকার বিশেষ गहन পুনরীক্ষণ (Special Intensive Revision বা SIR) প্রক্রিয়ার ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিভিন্ন জেলার ২০০ জনেরও বেশি আমলা ও উচ্চপদস্থ আধিকারিককে ব্যাপক হারে রদবদল করল।
পশ্চিমবঙ্গের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে মোট ৬১ জন IAS (ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা) এবং ১৪৫ জন WBCS (পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস) এক্সিকিউটিভ অফিসারের বদলি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় আকারের একলপ্তে রদবদল কার্যত নজিরবিহীন। স্বাভাবিকভাবেই, এই সিদ্ধান্তের পরই রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
EC-র দ্বারস্থ বিজেপি, দাবি কী?
শাসক শিবিরের এই পদক্ষেপকে ‘নিয়ম লঙ্ঘন’ আখ্যা দিয়ে বিজেপি তড়িঘড়ি নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছে, SIR ঘোষণার পর ২৩৫ জন আধিকারিকের (যাদের মধ্যে ১৭ জন জেলাশাসক, ২২ জন অতিরিক্ত জেলাশাসক, ৪৫ জন মহকুমা শাসক এবং ১৫১ জন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক অন্তর্ভুক্ত) এই বদলি আসলে ‘অনিয়মিত’ এবং এটি নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে। বিজেপি অবিলম্বে এই রদবদল বাতিল করার দাবি জানিয়েছে।
বদলি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকরা কারা?
এই বড় রদবদলে ১০ জন জেলাশাসক, একাধিক বিশেষ সচিব, OSD, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ADM) এবং মহকুমা শাসক (SDO) অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বদলির তালিকায় HIDCO-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর, কলকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার এবং হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের CEO-ও রয়েছেন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, দার্জিলিং, মালদহ, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসকরাও এই রদবদলের আওতায় এসেছেন।
রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে
এই বদলিকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
- বিজেপির অভিযোগ এই ব্যাপক রদবদল আসলে SIR প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা। বিজেপি নেতা সজল ঘোষের দাবি, সরকার ভয় পাচ্ছে যে SIR সফল হলে বিপুল সংখ্যক ‘ভুয়ো ভোটারের’ নাম বাদ পড়বে, যা তাদের দলের ক্ষতি করবে। তাই শেষ মুহূর্তে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে।
- অন্যদিকে, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এই সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য এর পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন, এটি একটি ‘নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া’। তিনি দাবি করেন, বছরভর প্রশাসনে এ ধরনের বদলি হয়েই থাকে এবং এই বদলির সঙ্গে SIR ঘোষণার কোনো সম্পর্ক খোঁজা ‘নির্বুদ্ধিতা’ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর মতে, বিজেপি কেবল বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করছে।