প্যাড ব্যবহারে বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জানুন আসল কারণ – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
ন্যাশনাল ডেস্ক: মাসিক বা পিরিয়ডের সময় পরিচ্ছন্ন এবং আরামদায়ক থাকতে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার এখন ভারত জুড়ে সাধারণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে, যা মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। তা হলো— দীর্ঘদিন ধরে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করলে কি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্বেগ সম্পূর্ণ অমূলক নয়। যদিও প্যাড পরা মাত্রই ক্যানসার হয় না, কিন্তু তা দীর্ঘ সময় ধরে পরে থাকা বা নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক যুক্ত প্যাড ব্যবহারের ফলে ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসার-সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষ করে কর্মজীবী বা স্কুলের ছাত্রীরা যারা দীর্ঘক্ষণ প্যাড পরিবর্তন করার সুযোগ পান না, তাদের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্যানিটারি প্যাড কি সত্যিই ক্যানসারের কারণ?
বিভিন্ন গবেষণা ও রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাজারে প্রচলিত কিছু স্যানিটারি প্যাডে এমন রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বেশিরভাগ প্যাড সম্পূর্ণভাবে তুলা বা কটন দিয়ে তৈরি হয় না। বরং সেগুলিতে সেলুলোজ জেল এবং ডাইঅক্সিনের মতো রাসায়নিকের মিশ্রণ থাকে। এই উপাদানগুলি শরীরের সংস্পর্শে এলে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
গবেষণায় কী উঠে এসেছে?
২০২২ সালে দিল্লির পরিবেশ সংস্থা টক্সিক্স লিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করে। এই গবেষণায় ভারতের ১০টি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের স্যানিটারি প্যাডের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেই ফলাফলে দেখা যায়, একাধিক প্যাডে থ্যালেটস (Phthalates), ভিওসি (Volatile Organic Compounds), ডাইঅক্সিন, ফেনল এবং প্যারাবেনের মতো রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এই বিষাক্ত উপাদানগুলি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অ্যালার্জি ও সংক্রমণের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডাক্তার কে. ভেঙ্কটেশ চৌধুরী-এর মতে, থ্যালেটস এবং ডাইঅক্সিনের মতো রাসায়নিকগুলি মহিলাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেম বা হরমোন তন্ত্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এর ফলে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা (ফার্টিলিটি) কমে যেতে পারে। দীর্ঘদিন এই ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
প্যাড ব্যবহারের সঠিক ও নিরাপদ উপায়
বিশেষজ্ঞরা এই ঝুঁকি কমাতে মহিলাদের কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন:
- নিয়মিত প্যাড পরিবর্তন: রক্তপাত কম হোক বা বেশি, প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর প্যাড পরিবর্তন করা অপরিহার্য। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: প্যাড পরিবর্তনের আগে ও পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
- তুলার প্যাড বেছে নিন: ত্বকের পক্ষে নিরাপদ এবং অ্যালার্জি বা র্যাশ থেকে বাঁচতে ১০০% কটন বা তুলার তৈরি প্যাড ব্যবহার করাই শ্রেয়।
- সস্তার প্যাড এড়িয়ে চলুন: খুব সস্তা বা নকল প্যাডগুলিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা নিম্নমানের উপাদান থাকতে পারে, তাই সেগুলি কেনা থেকে বিরত থাকুন।
- রাতেও প্যাড বদলান: রাতে দীর্ঘ সময় ধরে একই প্যাড পরে থাকলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে।