পৃথিবীর যে দেশ সেনাবাহিনী ছাড়াই যুদ্ধে গিয়েছিল, যুদ্ধ ৪৪ বছর ধরে চলেছিল, রক্তপাত হয়নি, গোলাগুলিও পোড়ানো হয়নি! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক দেশ আছে যাদের ইতিহাস শুনলে অবাক হতে হয়। তেমনই এক দেশ হল অ্যান্ডোরা। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত দেশগুলির মধ্যে একটি হয়েও ইউরোপের এই ছোট্ট দেশটি টানা ৪৪ বছর ধরে যুদ্ধের অবস্থায় ছিল! ভাবছেন, সেনা বা গোলা-বারুদ ছাড়াই কীভাবে এত বছর যুদ্ধ চলল? ইউরোপের এই ছোট্ট দেশের অবাক করা ইতিহাস জেনে নিন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রধানত ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, জার্মানি প্রযুক্তির দিক থেকে অ্যান্ডোরার সঙ্গে আরও ৪৪ বছর ধরে যুদ্ধের অবস্থায় ছিল। ইউরোপের এই ছোট পাহাড়ি দেশটি জার্মানি এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা প্রথম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। অ্যান্ডোরার নিজস্ব কোনো সামরিক বাহিনী না থাকায় যুদ্ধে তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না। যখন যুদ্ধ শেষ হয় এবং বিশ্বনেতারা শান্তি চুক্তির আলোচনা শুরু করেন, তখন কোনো এক তাড়াহুড়োয় অ্যান্ডোরাকে কেউ খেয়ালই করেনি।
১৯১৯ সালে যখন ভার্সাই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়, তখন ইউরোপের এই ছোট দেশ অ্যান্ডোরাকে সেই শান্তি সম্মেলনে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। এই কারণে প্রযুক্তিগতভাবে জার্মানি ও অ্যান্ডোরার মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি শেষ হয়নি। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে এই অবস্থা চলেছিল।
অবশেষে ১৯৫৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দীর্ঘ যুদ্ধ শেষ বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, এই ১৯১ বর্গ মাইল আয়তনের পাইরেনিজ প্রজাতন্ত্রের (অ্যান্ডোরা) জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। যুদ্ধ সমাপ্তির নির্দেশ জারি হওয়ার পর জার্মানি ও অ্যান্ডোরা অবশেষে শান্তির যুগে ফিরে আসে।
অ্যান্ডোরা শুধু দীর্ঘ যুদ্ধের জন্যই নয়, আরও একটি কারণে বিখ্যাত। এই দেশে কোনো প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা রাজা নেই। শুধু দুই জন প্রিন্স এই দেশ চালান। সেনা বা সামরিক বাহিনীও নেই। এমনকি কোনো বিমানবন্দর বা রেল স্টেশনও নেই। তবে এটি ফ্রান্স ও স্পেনের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।