বিমান টিকিটের দাম কি এবার আকাশ ছোঁবে? ভারতীয় এয়ারলাইন্সের ‘১০৫ বিলিয়ন টাকার’ চরম সংকটে আপনিও ভুক্তভোগী! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল বিমান পরিবহন শিল্প একটি চরম আর্থিক সংকটের মুখে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে, বিমান সংস্থাগুলির আর্থিক ক্ষতি বা নিট লোকসান আগামী অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২৬ সালে প্রায় ১০৫ বিলিয়ন টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এই বিপুল অঙ্কের আর্থিক বোঝা সরাসরি যাত্রীদের পকেটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলস্বরূপ বিমান টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রেটিং এজেন্সি ICRA-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই লোকসান প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থবর্ষ ২০২৫-এ যেখানে লোকসানের পরিমাণ ৫৫ বিলিয়ন টাকা থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, সেখানে পরের বছর তা ৯৫ থেকে ১০৫ বিলিয়ন টাকার মধ্যে থাকতে পারে। এই বিশাল অঙ্কের ঘাটতি মেটানোর জন্য বিমান সংস্থাগুলির ওপর খরচ কমানো এবং আয় বৃদ্ধির চাপ বাড়বে, যা উড়ানের খরচ বা টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
কেন বাড়ছে এই বিপুল লোকসান? ডলার ও জ্বালানির জোড়া ধাক্কা
এই আর্থিক সংকটের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে প্রধান দুটি হলো—বিমানের জ্বালানি (ATF) এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।
বিমান সংস্থাগুলির মোট খরচের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই ব্যয় হয় জ্বালানি বাবদ। যদিও গত বছরের তুলনায় জ্বালানির গড় দাম কিছুটা কম ছিল, কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দামের অস্থিরতা এবং সর্বশেষ অক্টোবর মাসে ATF-এর দামে ৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি, পরিচালন ব্যয়কে লাগাতার বাড়িয়ে চলেছে।
এছাড়াও, বিমান সংস্থাগুলির বেশিরভাগ বড় খরচ—যেমন বিমান লিজ নেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রাংশ কেনা—ডলারে করতে হয়। কিন্তু ভারতীয় টাকার তুলনায় ডলারের ক্রমাগত শক্তিশালী হওয়া, দেশীয় মুদ্রায় উপার্জন করা এই সংস্থাগুলির মুনাফা খেয়ে ফেলছে।
দেশীয় উড়ানে ‘মনমরা ভাব’, আন্তর্জাতিক বাজারে উজ্জ্বলতা
একদিকে যখন লোকসানের অঙ্ক বাড়ছে, অন্যদিকে যাত্রীদের সংখ্যায় একটি অদ্ভুত প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ দেশের অভ্যন্তরে বিমান যাত্রীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ১.৪ শতাংশ কমে ১২৮.৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। ICRA একে ‘সাবধানী ভ্রমণের মানসিকতা’ বলে ব্যাখ্যা করছে, যা সম্ভবত ক্রমবর্ধমান টিকিটের দাম বা অনিশ্চয়তার কারণে।
তবে অভ্যন্তরীণ বাজারের এই নিম্নমুখী গ্রাফের বিপরীতে আন্তর্জাতিক রুটে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য সুখবর রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায়, আগস্ট ২০২৫-এ আন্তর্জাতিক যাত্রী সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯.৯ লাখে পৌঁছেছে।
ইঞ্জিন খারাপ ও বিমান ‘গ্রাউন্ডেড’ হওয়ার সংকট
আর্থিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিমান সংস্থাগুলি অভ্যন্তরীণ সমস্যাতেও জর্জরিত। ইঞ্জিন সংক্রান্ত ত্রুটি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের জটিলতার কারণে, বিশেষত প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি (Pratt & Whitney) ইঞ্জিনের সমস্যায় অনেক বিমানকে উড়ানে অক্ষম হয়ে মাটিতে বসিয়ে রাখতে হয়েছে বা ‘গ্রাউন্ডেড’ করতে হয়েছে। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩৩, যা ভারতের মোট বিমান বহরের ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। যখন একটি বিমান উড়তে পারে না, তখন সেটি কোনো আয় করে না, কিন্তু তার খরচ (যেমন লিজের ভাড়া) কিন্তু চলতেই থাকে, যা লোকসানকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, যে বিমান সংস্থাগুলির পেছনে শক্তিশালী মূল সংস্থা বা ‘প্যারেন্ট কো ম্পা নি’ রয়েছে, তারা এই চাপ কিছুটা হলেও সামলে নিতে পারছে। যদিও এই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ICRA অর্থবর্ষ ২০২৬-এর জন্য বিমান পরিবহণ শিল্পের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭-১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪-৬ শতাংশ করেছে।