১০০ বছর পর হঠাৎই ফিরে এল ‘বিলুপ্ত’ প্রাণী! জঙ্গলে আরাম করে ঘুরছিল এই জন্তু, দেখে চক্ষু চড়কগাছ বিজ্ঞানীদের – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
পাপুয়া নিউ গিনির (Papua New Guinea) রহস্যময় জঙ্গল থেকে এক অবিশ্বাস্য খবর সামনে এসেছে, যা বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। প্রায় ১০০ বছর পর আবার দেখা মিলল বিরল প্রজাতির ‘वोंডिवोई ট্রি ক্যাঙ্গারু’ ($Dendrolagus mayri$) -র!
১৯২৮ সালের পর শেষবারের মতো এই প্রাণীটিকে দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকেই একে বিলুপ্তপ্রায় বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি পাপুয়া নিউ গিনির দূরবর্তী ওন্ডেভয় (Wondiwoi) পাহাড়ে এই দুর্লভ ক্যাঙ্গারুটি আবার ক্যামেরাবন্দী হয়েছে।
কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল-এর (Conservation International) একটি দল এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় এক গাইড যখন এটিকে গাছে লাফাতে দেখেন, তখন ভিডিও করে ফেলেন। সেই ভিডিও দেখেই বিজ্ঞানীরা কার্যত হতবাক হয়ে যান। কারণ, এই মার্সুপিয়ালটিকে এতদিনে বিলুপ্ত বলে মনে করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্যাঙ্গারুটি তখন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
ট্রি ক্যাঙ্গারু পরিবারের এই সদস্যটি পৃথিবীর অন্যতম এক অদ্ভুত প্রাণী, যা মাটির পাশাপাশি গাছেও চড়তে পারে। ভারসাম্য রক্ষার জন্য এদের রয়েছে লম্বা লেজ এবং গাছে চড়ার জন্য মজবুত থাবা।
কেন এটি এত বিরল?
এই ভोंডিবয় প্রজাতির ক্যাঙ্গারু ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া সংলগ্ন পাপুয়া নিউ গিনির সীমান্তে বসবাস করে। ১৯২৮ সালে এক ডাচ বিজ্ঞানী শেষবার এর উপস্থিতি নথিভুক্ত করেছিলেন। এরপর অবৈধ শিকার, নির্বিচারে বন উজাড় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এটিকে আইইউসিএন রেড লিস্টে ‘ক্রিটিক্যালি এন্ডেঞ্জার্ড’ (Critically Endangered) ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছিল। তবে দীর্ঘকাল কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় এটিকে বিলুপ্ত বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাই এই নতুন খোঁজ সবাইকে চমকে দিয়েছে।
কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টর ড. এলিজাবেথ বেনেট এই আবিষ্কারকে ‘জৈব বৈচিত্র্যের এক অলৌকিক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “প্রায় ৯০ থেকে ১০০ বছর পর একটি প্রজাতির ফিরে আসা প্রমাণ করে যে ‘বিলুপ্ত’ হওয়া মানে শুধু আমাদের দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া, চিরতরে বিলীন হয়ে যাওয়া নয়।”
জীবন্ত প্রাপ্তবয়স্ক এই ক্যাঙ্গারুটিকে এই প্রথম ক্যামেরায় রেকর্ড করা হলো। এর পরিবেশগত গুরুত্ব অপরিসীম। পাপুয়া নিউ গিনির ওন্ডেভয় পাহাড়, যা হাজারেরও বেশি পাখি প্রজাতি এবং শত শত স্তন্যপায়ী প্রাণীর বাসস্থান, তা এখন আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে। ট্রি ক্যাঙ্গারু বীজ ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—এরা ফল খেয়ে বীজ দূরে বহন করে নিয়ে যায়, যা জঙ্গলের বৃদ্ধি ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তবে এই পুনর্বার আবিষ্কারের পরেও বিপদ কিন্তু কাটেনি। অবৈধ কাঠ কাটা, খনি প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বনাঞ্চল ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। যদিও ২০২৫ সালে পাপুয়া সরকার এই এলাকাটিকে সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করেছে, তবুও এনজিওগুলি বলছে যে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন। ডব্লিউডব্লিউএফ (WWF)-এর এক রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে, “যদি সংরক্ষণ বাড়ানো না হয়, তবে এই প্রত্যাবর্তন শেষ নিঃশ্বাসও হতে পারে।”