শরীর ঠিক কী কী লক্ষণ দিয়ে ব্লকের সঙ্কেত দেয়? জীবন-মরণের ফারাক গড়ে দিতে পারে এই লক্ষণগুলো – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

আজকাল জীবন যেন এক নিরন্তর দৌড়। এই ছুটে চলার মাঝে নিজের শরীরের দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত কারোরই নেই। আর এই অসচেতনতার সুযোগেই ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে বাসা বাঁধছে এক নীরব ঘাতক— করোনারি আর্টারি ডিজিজ, যা আমাদের হৃৎপিণ্ডের ধমনীগুলোকে ব্লক করে দেয়। শরীর কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে বিপদের সঙ্কেত দেয় না, বরং অনেক আগে থেকেই পাঠাতে থাকে ছোট ছোট বার্তা। এই সঙ্কেতগুলো সময়মতো চিনে নিতে পারলেই জীবন আর মরণের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেওয়া সম্ভব।

হৃৎপিণ্ডের ধমনী যখন সংকীর্ণ হতে থাকে, তখন হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। এর ফলস্বরূপ শরীরে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, যা আমাদের সতর্ক করে। এই লক্ষণগুলি চিনে রাখা তাই অত্যন্ত জরুরি।

বুকে ব্যথা বা অ্যাঞ্জাইনা

হৃদরোগের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ এটি। তবে এই ব্যথা সাধারণত ছুরির মতো ধারালো হয় না। বরং বুকে এক ধরনের চাপ, দমবন্ধ করা অনুভূতি বা ভারী বোঝা চেপে বসার মতো অস্বস্তি হয়। এই ব্যথা প্রায়শই বুকের মাঝখান থেকে বাঁ কাঁধ, বাহু, ঘাড় বা চোয়ালের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সিঁড়ি ভাঙার সময় এই ব্যথা শুরু হয় এবং বিশ্রাম নিলে ধীরে ধীরে কমে যায়।

শ্বাসকষ্ট

যে সিঁড়ি আপনি এক সময় অবলীলায় ভাঙতেন, এখন কি তার মাঝপথেই আপনাকে থামতে হচ্ছে? সামান্য পরিশ্রমে দম ফুরিয়ে যাওয়া বা হাঁপ ধরা ধমনী ব্লকের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়লে তা দক্ষতার সঙ্গে রক্ত পাম্প করতে পারে না, যার ফলে ফুসফুসে চাপ পড়ে এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ক্লান্তি

সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এই ক্লান্তি একেবারেই ভিন্ন। ঘুম থেকে ওঠার পরেও যদি তীব্র অবসাদ থাকে, অথবা দৈনন্দিন কাজ করতেও অনীহা বা অক্ষমতা বোধ হয়, তবে তা উদ্বেগের বিষয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সংকীর্ণ ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত পাঠাতে হৃৎপিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

ছদ্মবেশী উপসর্গ

অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী এবং মহিলাদের মধ্যে, বুকে ব্যথার মতো চিরাচরিত লক্ষণ দেখা যায় না। এর বদলে বুকে জ্বালা, হজমের সমস্যা, বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। অনেক সময় গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ভেবে এই লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা করা এক মারাত্মক ভুল হতে পারে।

যদি উপরের উপসর্গগুলো আপনার মধ্যে দেখা যায়, তাহলে তাকে বয়সের দোহাই দিয়ে বা কাজের চাপ আছে ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, ধমনীর অসুখের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আপনার আজকের সচেতনতাই আগামীর বড় বিপদ রুখে দিতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *