স্রেফ একটা ফোন কলে শেষ হয়ে গেল সর্বস্ব, ৭২ ঘণ্টা ‘ডিজিটাল বন্দি’ হয়ে খোয়ালেন ২৩ কোটি! – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
সাইবার দুনিয়ায় এক ভয়ানক খেলার শিকার হলেন দিল্লির এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁকে ‘ডিজিটাল বন্দি’ করে তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় হাতিয়ে নিল প্রতারকরা।
দক্ষিণ দিল্লির গুলমোহর পার্কের বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়সী নরেশ মালহোত্রাকে মুম্বই পুলিশ, ইডি ও সিবিআইয়ের নামে ভয় দেখিয়ে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০টি লেনদেনের মাধ্যমে তাঁর মোট ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা।
কীভাবে ফাঁদ পাতা হলো?
গত ৪ আগস্ট ২০২৩-এ নরেশ মালহোত্রার ল্যান্ডলাইনে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, তিনি মুম্বই পুলিশের একজন ইনস্পেক্টর। ফোনের ওপার থেকে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর আধার কার্ড ব্যবহার করে মাদক পাচার ও বেআইনি ফোন সংযোগের মতো অপরাধ করা হয়েছে। এরপরই শুরু হয় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নাটক। ইডি ও সিবিআইয়ের নাম করে ভিডিও কলে নরেশ মালহোত্রাকে ‘তদন্ত’ দেখানো হয়। এমনকি এই অপরাধকে পুলওয়ামা হামলার সঙ্গেও যুক্ত করা হয়।
ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন একা থাকা এই বৃদ্ধ। প্রতারকরা তাঁকে হুমকি দিয়ে জানায়, ‘যদি কাউকে কিছু জানান, তাহলে আপনার মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনিরা বিপদে পড়বে।’
এই হুমকির ফলে নরেশ মালহোত্রা প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়েন। ৪ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা এক মাস ধরে তিনি ২০টি দফায় প্রায় ২২.৯২ কোটি টাকা প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। প্রতারকরা তাঁকে ‘জামানত’ দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘তদন্ত শেষে আরবিআই-এর মাধ্যমে আপনার টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ এই ফাঁদে পা দিয়ে তিনি নিজের শেয়ার বিক্রি করে কোটাক মাহিন্দ্রা, এইচডিএফসি ও কানারা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠান। ৪ সেপ্টেম্বর প্রতারকরা অদৃশ্য হয়ে গেলে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপরই ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম পোর্টালে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশের তদন্ত শুরু
দিল্লি পুলিশের আইএফএসও ইউনিট এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। জয়েন্ট কমিশনার রজনীশ গুপ্তা জানিয়েছেন, ‘আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি এবং ১২.১১ কোটি টাকা ফ্রিজ করতে পেরেছি। বাকি টাকা অন্য অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। যে দুটি নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, এই প্রতারক চক্রটি অত্যন্ত হাই-টেক। তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ভুয়া ভয়েস ও ভিডিও কলের মাধ্যমে মানুষকে ফাঁদে ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রটি মিয়ানমার, কম্বোডিয়া বা লাওস থেকে কাজ করছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রতারণা শুধু আর্থিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। কোনো সরকারি সংস্থা ফোন করে কাউকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেয় না। তাই এই ধরনের ফোন এলে দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়া উচিত। এই ২৩ কোটি টাকার প্রতারণা থেকে এটাই শেখার যে, অজানা নম্বর থেকে আসা ফোন থেকে সাবধান থাকতে হবে।