ক্যালকাটা হাইকোর্টের চাঞ্চল্যকর রায়: স্ত্রী চাকরিজীবী হলেও বেকার স্বামীকে দিতে হবে খোরপোষ, জানুন পুরো ঘটনা – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

কলকাতা: স্ত্রী চাকরি করেন, মাসে তাঁর আয় ১২,০০০ টাকা। অন্যদিকে, স্বামী বেকার। তবে শুধু বেকারত্বের অজুহাতে স্ত্রীকে খোরপোষ দেওয়া থেকে রেহাই মিলবে না। বিবাহবিচ্ছেদের পর খোরপোষের ৪,০০০ টাকা প্রতি মাসে স্ত্রীকে দিতেই হবে।

সম্প্রতি এক মামলার রায়ে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। জানা গেছে, ওই মামলায় বেকার স্বামীর আবেদন মঞ্জুর করে খোরপোষের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল পারিবারিক আদালত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন স্ত্রী। হাইকোর্ট পারিবারিক আদালতের রায় বাতিল করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, হাইকোর্ট বেকার স্বামীকে চাকরি খুঁজে স্ত্রীকে খোরপোষ দেওয়ারও নির্দেশ দেয়।

বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। সেখানে বিচারপতি বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের পর স্ত্রীকে খোরপোষ দেওয়া যেকোনো স্বামীর সামাজিক, আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব। কোনো অজুহাতেই এই দায়িত্ব এড়ানো যায় না। বিশেষ করে সক্ষম কোনো পুরুষ যদি বেকারত্বের কারণে স্ত্রীকে খোরপোষ দিতে অস্বীকার করেন, তবে তা তাঁর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত। আইনি দায়িত্ব এড়াতে তিনি এই বেকারত্বকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না।

জানা গেছে, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী ২০১২ সালের ৪ অগস্ট ওই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল। সামাজিক বিয়ে না হওয়ায় স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি যাননি। অনেকবার স্বামী তাঁর বাড়িতে এলেও তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাননি। এক বছর এভাবে চলার পর স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। এরপর স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। খোরপোষ হিসেবে স্ত্রী প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু পারিবারিক আদালতে মামলার শুনানিতে স্বামী জানান, যেহেতু স্ত্রীর নিজের রোজগার আছে, তাই তাঁর পক্ষে ১০,০০০ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ তিনি বেকার। এই মামলায় পারিবারিক আদালত স্বামীর পক্ষে রায় দিয়ে তাঁকে ‘গরিব বেকার অসহায়’ বলে উল্লেখ করে। আদালত জানায়, স্বামী চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে নিজের রোজগারেই জীবন ধারণ করতে হবে। এরপর স্ত্রী এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যান।

হাইকোর্ট স্ত্রীর আবেদন মেনে নিয়ে পারিবারিক আদালতের দেওয়া রায় বাতিল করে। আদালত জানায়, স্ত্রীর উপার্জন কম এবং স্বামীর রোজগারের সক্ষমতা রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তিনি স্ত্রীর প্রতি তাঁর আইনি দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। পিটিশনার (স্ত্রী) নিজের পেট চালানোর জন্য সামান্য উপার্জন করছেন, এর মানে এই নয় যে তিনি খোরপোষের অধিকারী নন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, পিটিশনারের স্বামী নিয়ম ভাঙার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। তিনি চাইলে অন্য চাকরি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি বেকার থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাই আদালত তাঁকে স্ত্রীর খোরপোষের দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দেয় এবং প্রয়োজনে চাকরি খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। আদালত প্রতি মাসে স্ত্রীকে ৪,০০০ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে স্ত্রীর ১২টি কিস্তির খরচও মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই মামলার কার্যক্রম পারিবারিক আদালতেই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *