ড্রোন থেকে বাড়ি নজরে রাখত, প্রাক্তন প্রেমিকের অত্যাচারে নরক হয়েছিল তরুণীর জীবন – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
ভালোবাসার সম্পর্ক, অথচ সেই প্রেমেই এক নারীর জীবন পরিণত হয় এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। প্রাক্তন প্রেমিক এতটাই নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শুরু করে যে, তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেই নারী তুলে ধরেছেন তার যন্ত্রণার কথা। তার জীবনের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে চোখ বুজে নয়, বরং খোলা রেখে ভালোবাসা উচিত।
ইংল্যান্ডের সেই নারীর মর্মান্তিক কাহিনী শুনে নেওয়া যাক।
সবখানে নজর রাখত প্রাক্তন
৩৩ বছর বয়সী ডমিনিক উইলিয়ামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে নানাভাবে হয়রান করত। আদালতে সেই নারী জানান, সম্পর্ক শেষ হওয়ার পরেও উইলিয়ামস তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিল না। সে তার বাড়ির ওপর ড্রোন উড়িয়ে তার সব গতিবিধির ওপর নজর রাখত। শুধু তাই নয়, তার গাড়িতে একটি এয়ারট্যাগ লাগিয়ে তার অবস্থান ট্র্যাক করা শুরু করে। সে কোথায় যায়, কী করে—সবকিছুই উইলিয়ামসের নজরে থাকত। এই ক্রমাগত নজরদারির কারণে ভুক্তভোগী নারী সবসময় অনুভব করতেন যে কেউ যেন তার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছে।
অপমানজনক মেসেজ ও কল
ভুক্তভোগী জানান, তিনি উইলিয়ামসকে বহুবার অনুরোধ করেছেন, কেঁদে বলেছেন তাকে একা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সে ক্রমাগত কল ও মেসেজ করে যেত। কখনো অপমান করত, আবার কখনো বলত যে সে তাকে ভালোবাসে। নারীটি বলেন, এই মানসিক যন্ত্রণায় তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে প্রায়শই গাড়িতে একা বসে কাঁদতেন। পরিবারের সামনে কান্না লুকানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তার ওজনও অনেক কমে যায়।
অশালীন ছবি পাঠিয়ে মিথ্যা অভিযোগ
সম্পর্কে থাকার সময়েও উইলিয়ামসের আচরণ ছিল নিয়ন্ত্রণমূলক ও অপমানজনক। সেই নারী যে পোশাক পরতেন, তা উইলিয়ামসের পছন্দ না হলে সে তা নষ্ট করে দিত। বারবার মিথ্যা অভিযোগ করত যে সে অন্য কারো সঙ্গে দেখা করে। এমনকি ইন্টারনেট থেকে অশালীন ছবি পাঠিয়ে অভিযোগ করত যে সেগুলো তারই ছবি। নারীটি আদালতকে জানান, তিনি নিজেকে একজন বন্দীর মতো অনুভব করতেন, যেন প্রতি মুহূর্তে কেউ তার নিঃশ্বাসের ওপরও নজরদারি চালাচ্ছে।
অবশেষে দোষী প্রমাণিত ও সাজা
শেষ পর্যন্ত কার্ডিফ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ডমিনিককে দোষী সাব্যস্ত করে। তাকে ১২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও তা দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। এছাড়াও, তাকে ২০ দিনের রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম, ৮০ ঘণ্টা বিনামূল্যে কাজ, প্রায় ৪২,০০০ টাকা (৪০০ পাউন্ড) কোর্ট খরচ এবং ১৯,৫০০ টাকা (১৮৭ পাউন্ড) ভিকটিম সার্ভিস সারচার্জ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই ঘটনা শুধু একজন নারীর গল্প নয়, বরং এমন বহু মানুষের কণ্ঠস্বর, যারা সম্পর্কের মধ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক ও স্টকিং আচরণের শিকার হন। ভালোবাসা যদি পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাসে পরিণত না হয়, তবে তা বিষাক্ত হয়ে ওঠে। এই নারীর জীবনের তিক্ত সত্য সেটারই সাক্ষ্য বহন করে।