যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র, এবার অস্ত্রভাণ্ডার মজুত করছে ভারত! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

নয়াদিল্লি: সোনা বা মূল্যবান ধাতুর মতোই এবার বিরল খনিজ ও ধাতু মজুত করার পথে হাঁটছে ভারত। এই উদ্যোগের মূল কারণ হলো প্রতিরক্ষা খাতে দেশীয় উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা এবং কোনো বহিরাগত সংকটে যেন এর সরবরাহ ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করা।

ভারত বর্তমানে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। কিন্তু এই সব আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম, যেমন—সুপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ যুদ্ধজাহাজ এবং ফাইটার জেটের মতো অস্ত্রের জন্য রেয়ার আর্থ মিনারেল বা বিরল খনিজ অপরিহার্য।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন এই প্রক্রিয়াজাত খনিজগুলোর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা বিশ্বজুড়ে এই শিল্পকে সংকটের মুখে ফেলেছে। নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্যের ওপর ভর করে চীন মনে করে, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব তার সামনে মাথা নত করবে। কিন্তু ভারত এবার এই ধরনের কোনো সমস্যা এড়াতে নিজস্ব কৌশল তৈরি করেছে।

স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ গঠন

ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ক্রান্তীয় খনিজ এবং বিরল খনিজের একটি কৌশলগত ভাণ্ডার গড়ে তোলার কথা ভাবছে। এই মজুত ভাণ্ডার ভবিষ্যতে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে সচল রাখতে ব্যবহার করা হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাজেশ কুমার সিংয়ের মতে, যেকোনো মুহূর্তে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে এই খনিজগুলোর প্রয়োজন হলে এই মজুত ভাণ্ডার কাজে আসবে। এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

খনির মর্যাদা ও সহজ প্রক্রিয়া

সরকার শুধু এই খনিজগুলোর মজুতই তৈরি করছে না, বরং এদের খনিগুলোকে ‘স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্ট’-এর মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবছে। এর ফলে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ হবে। এতে দুর্লভ খনিজগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হবে না।

রিসাইক্লিংয়ের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা

বিরল খনিজগুলোর গুরুত্ব এখন বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত শুধু মজুত গড়ার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে না, বরং এর বিকল্প হিসেবে রিসাইক্লিংয়ের ওপরও জোর দিচ্ছে। ব্যাটারি এবং ই-বর্জ্য থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলো আহরণের জন্য সরকার ১৫,০০০ কোটি টাকার একটি ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম চালু করেছে। এতে অতিরিক্ত খনিজের সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

ভারতে রয়েছে বিশাল ভাণ্ডার

পিআইবি-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অ্যাটোমিক মিনারেলস ডিরেক্টরেট-এর কাছে বিরল খনিজের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। বর্তমানে অনুমান করা হয়, ১৩.১৫ মিলিয়ন টন মোনাজাইটের মধ্যে প্রায় ৭.২৩ মিলিয়ন টন রেয়ার আর্থ অক্সাইড (REO) রয়েছে। এই খনিজগুলো থোরিয়াম এবং কাঁচা মাটিতে সমৃদ্ধ। সাধারণত এগুলো ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, তামিলনাড়ু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া, রাজস্থান এবং গুজরাটে প্রায় ১.২৯ মিলিয়ন টন রেয়ার আর্থ অক্সাইড রয়েছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া সারা দেশে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রায় ৪৮৬.৬ মিলিয়ন টন বিরল খনিজ আকরিক সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। এর অর্থ, ভারতে এই সম্পদের অভাব নেই, প্রয়োজন শুধু সঠিক প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবস্থাপনা।

চীনের বিকল্প সন্ধানে ভারত

চীন এই বছর প্রক্রিয়াজাত বিরল খনিজের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্ব এর বিকল্পের সন্ধানে নেমে পড়েছে। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ভারত তার সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে মিয়ানমারের খনিগুলোর দিকেও নজর দিয়েছে। একই সঙ্গে, তাইওয়ানও এই ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *