হামলার মুখে অকেজো হচ্ছে বিশ্বের সেরা যুদ্ধ হেলিকপ্টার? কেন বিপুল অর্থ খরচ করে তা কিনছে ভারত? – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
ওয়াশিংটন: একসময় যুদ্ধের ময়দানে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে পরিচিত ছিল মার্কিন অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। কিন্তু সাম্প্রতিক বিভিন্ন যুদ্ধে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে রাশিয়ার কেএ-৫২-এর মতো অন্যান্য অ্যাটাক হেলিকপ্টারও। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আধুনিক যুদ্ধ ব্যবস্থায় এই ধরনের হেলিকপ্টার এখন আর ততটা কার্যকরী নয়। বরং কিলিং ড্রোন এখন তাদের জায়গা নিচ্ছে।
কিন্তু যখন বিশ্বজুড়ে এই ধরনের হেলিকপ্টার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন ভারত কেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে অ্যাপাচে কিনছে? এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে যখন ভারতীয় অ্যাপাচে হেলিকপ্টারগুলোতে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে একাধিকবার জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে কেন অকার্যকর হচ্ছে এই হেলিকপ্টার?
ষাটের দশকে যখন অ্যাপাচে ডিজাইন করা হয়েছিল, তখন এর প্রধান লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তিশালী ট্যাঙ্কগুলোকে থামানো। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে ট্যাঙ্কগুলোর বিরুদ্ধে এটি সফলও হয়েছিল। কিন্তু গত ৩০ বছরে যুদ্ধের কৌশল আমূল পাল্টে গেছে।
এখন ট্যাঙ্ক ব্যবহারের পরিবর্তে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। এই মিসাইলগুলো হেলিকপ্টারের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। ফলে, যুদ্ধের ময়দানে হেলিকপ্টারের ভূমিকা এখন মূলত সীমিত। বর্তমানে তা শুধুমাত্র সেনা বাহিনীকে রসদ সরবরাহ বা আহত সৈন্যদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড্রোন বনাম হেলিকপ্টার: খরচ ও কার্যকারিতা
আধুনিক যুদ্ধে হেলিকপ্টারের চেয়ে ড্রোন বেশি কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। একটি অত্যাধুনিক অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের দাম প্রায় ৫২ মিলিয়ন ডলার। এর প্রতি ঘণ্টার উড্ডয়ন খরচ প্রায় ৭,০০০ ডলার। সেখানে একটি মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনের দাম ৩০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রতি ঘণ্টার খরচ মাত্র ৩,০০০ ডলার। তুরস্কের বায়রকতার টিবি২ ড্রোন আরও সস্তা, যার দাম ৫ মিলিয়ন ডলারের কম এবং প্রতি ঘণ্টার উড্ডয়ন খরচ ১,০০০ ডলারেরও কম।
পাশাপাশি, পাইলট প্রশিক্ষণের খরচ ও সময়ও হেলিকপ্টারের তুলনায় ড্রোনের ক্ষেত্রে অনেক কম। যেখানে একজন অ্যাপাচে পাইলট হতে দুই বছর লাগে এবং একটি মিশনে দুজন কর্মী প্রয়োজন হয়, সেখানে ড্রোন অপারেটরদের প্রশিক্ষণ এক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
তবুও কেন হেলিকপ্টার জরুরি?
এই সব যুক্তি সত্ত্বেও, যুদ্ধের ময়দান থেকে হেলিকপ্টার পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এটি এখনও অপরিহার্য। দুর্গম উপত্যকা বা গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে, কিংবা অত্যন্ত ধীর গতিতে বা সংকীর্ণ জায়গায় মোতায়েন হওয়ার ক্ষেত্রে ড্রোন এখনও হেলিকপ্টারের বিকল্প হতে পারেনি। এছাড়াও, অ্যাপাচের মতো হেলিকপ্টারের শক্তিশালী ৩০ মিমি কামান পাইলটের হেলমেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যা দিয়ে দ্রুত নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করা যায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার সময় ইসরায়েলি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার শত শত জঙ্গিকে খতম করেছিল।
তাহলে ভারতের অ্যাপাচে কেনার কারণ কী?
ভারতের কাছে বর্তমানে ২২টি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীও আরও ৬টি অ্যাপাচে কেনার চুক্তি করেছে, যার মধ্যে প্রথম ৩টি এই বছর জুলাই মাসে পাওয়ার কথা।
ভারত কেন এমন বিতর্কিত পরিস্থিতিতেও অ্যাপাচে কিনছে, তার একটি প্রধান কারণ হলো দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত খুবই দুর্গম এবং পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই ধরনের এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা থেকে শুরু করে শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য হেলিকপ্টার অপরিহার্য। তাই হয়তো সমস্ত বিতর্ককে পেছনে ফেলে ভারত তার সামরিক শক্তি বাড়াতে অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের উপর ভরসা করছে।