সৌদি আরবে ‘নরক’র চেয়েও ভয়ঙ্কর ‘সুধার কেন্দ্র’, যেখানে মেয়েদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন! – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
পৃথিবীর অন্যতম রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে নারীদের স্বাধীনতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু সম্প্রতি সেখানকার তথাকথিত ‘সুধার কেন্দ্র’ নিয়ে যে ভয়াবহ তথ্য ফাঁস হয়েছে, তা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এগুলি আদতে নরকতুল্য, যেখানে সামান্যতম নিয়ম ভাঙলেই মেয়েদের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘দার আল-রিয়ায়া’ নামের এই গোপন কেন্দ্রগুলিতে মূলত সেইসব তরুণীদের আটকে রাখা হয়, যারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কথা অমান্য করেছে বা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। এদের ওপর প্রতিদিন চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। নগ্ন করে গরম রডের ছ্যাঁকা দেওয়া বা চাবুক মারা সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা। সকাল-বিকেল চলে এই ভয়াবহ প্রহার।
সুধার নামে চরম অমানবিকতা
১৯৬০ সাল থেকে চালু হওয়া এই কেন্দ্রগুলিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়ম ভাঙার অপরাধে বন্দি করা হয় মেয়েদের। পরিবার থেকে পালিয়ে যাওয়া, প্রেম করা, এমনকি অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনোর মতো ‘অপরাধ’-এর জন্য তাদের ঠাঁই হয় এখানে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বন্দিনীদের সপ্তাহে একাধিকবার বেত্রাঘাত করা হয়, নামাজ না পড়লে মারধর করা হয় এবং জোর করে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়।
বহির্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন জীবন
এই কেন্দ্রগুলিতে বন্দি মেয়েদের সঙ্গে পরিবারের বা বন্ধুদের দেখা করার কোনো অনুমতি নেই। অনেক মেয়েকে বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখা হয়, যতক্ষণ না কোনো পুরুষ অভিভাবক তাদের ফিরিয়ে নিতে আসে। এক প্রাক্তন বন্দিনীর বয়ান অনুযায়ী, যখন তাকে এই কেন্দ্রে পাঠানো হয়, তখন সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। কারণ সে জানত, এই জায়গাটা এক জীবন্ত নরক।
পরিচয় নয়, শুধুই নম্বর
এখানে মেয়েদের ব্যক্তিগত পরিচয় মুছে ফেলা হয়। তাদের নাম ধরে ডাকা হয় না, বরং নম্বর দিয়ে সম্বোধন করা হয়। যেমন ‘নম্বর ৩৫, এদিকে এসো’। যদি কোনো মেয়ে নিজের পারিবারিক নাম বলে ফেলে, তবে তাকে সবার সামনে বেত্রাঘাত করা হয়। এমনকি, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েদেরও এখানে ভার্জিনিটি টেস্ট করা হয় এবং প্রতিবাদ রুখতে তাদের ঘুম পাড়ানি ওষুধ দেওয়া হয়।
ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না নির্যাতিতারা
মানবাধিকার কর্মী মারিয়াম আল-দোসারী এবং সারা আল-ইয়াহিয়াহ বহু নির্যাতিত মেয়ের গল্প সংগ্রহ করেছেন। এক মেয়ে জানিয়েছে, কীভাবে তার বাবা তাকে এই কেন্দ্রে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করত। আরেকজন মহিলাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় শুধু এই কারণে যে তিনি এক নির্যাতিত মেয়েকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সৌদি আইনে ‘পলাতক’ মহিলাকে আশ্রয় দেওয়া একটি গুরুতর অপরাধ।
অপমান ঢাকতে নির্যাতনের হাতিয়ার
‘দার আল-রিয়ায়া’ কেন্দ্রগুলি আসলে পরিবারের ‘সম্মান’ বাঁচানোর একটি উপায় হয়ে উঠেছে। যদি কোনো মহিলা পরিবারের কোনো সদস্য দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হন বা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তবে সমাজ থেকে বদনাম এড়াতে তাকে এই কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে অপরাধীরা মুক্ত থাকে আর শিকার হয় বন্দি।
স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয় ভয়
সৌদি আরবের মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই এই কেন্দ্রগুলোর ভয় দেখানো হয়। এক প্রাক্তন ছাত্রীর বয়ানে জানা গেছে, ১৬ বছর বয়সে তাদের স্কুলে একটি মেয়ে এসেছিল, যাকে প্রেম করার জন্য এই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। সেই মেয়েটি সব ছাত্রীকে সতর্ক করে বলেছিল, ‘একবার কোনো মেয়ে যদি সস্তা হয়ে যায়, তবে সে সারা জীবন সস্তাই থেকে যাবে’।