‘মেয়ে, জামাই এবং নাতি-নাতনিরা বিপদে’, ৭৮ বছর বয়সী প্রাক্তন ব্যাংকারকে ‘ডিজিটালভাবে বন্দী’ করে ২৩ কোটি টাকা লুট – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

সাইবার অপরাধের এক ভয়াবহ অধ্যায়ে, এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্কারকে এক মাস ধরে ‘ভার্চুয়াল বন্দি’ করে তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় হাতিয়ে নিল প্রতারকরা। ঘটনাটি দিল্লির, যেখানে ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে ডিজিটাল বন্দি করে ২৩ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের আইএফএসও ইউনিট এই বিশাল জালিয়াতির তদন্ত করছে।

কীভাবে পাতা হয়েছিল এই ডিজিটাল ফাঁদ?

ঘটনার সূত্রপাত ৪ আগস্ট, ২০২৫। দিল্লির গুলমোহর পার্কের বাসিন্দা নরেশ মালহোত্রা নামে ওই বৃদ্ধের ল্যান্ডলাইনে একটি ফোন আসে। নিজেকে মুম্বাই পুলিশের ইন্সপেক্টর পরিচয় দিয়ে কলার জানায় যে তাঁর আধার কার্ড মাদক পাচার এবং অবৈধ ল্যান্ডলাইন সংযোগে ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর শুরু হয় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নাটক।

প্রতারকরা নিজেদের ইডি এবং সিবিআই কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভিডিও কলে ‘তদন্ত’ শুরু করে। পুলওয়ামা হামলা এবং সন্ত্রাসবাদের মতো স্পর্শকাতর বিষয় টেনে এনে তাঁকে ভয় দেখানো হয়। একাকী বসবাসকারী মালহোত্রাকে হুমকি দেওয়া হয়, “কাউকে কিছু বললে তোমার মেয়ে, জামাই এবং নাতি-নাতনিরা বিপদে পড়বে!”

এই হুমকির মুখে আতঙ্কিত হয়ে, ৪ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, মালহোত্রা ২০টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ২২.৯২ কোটি টাকা প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। প্রতারকরা তাঁকে ‘জামানত আদেশ’ এবং আরবিআই-এর ভুয়া চিঠি দিয়ে বোঝায় যে তদন্ত শেষে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। বাধ্য হয়ে তিনি শেয়ার বিক্রি করেন এবং কোটাক মাহিন্দ্রা, এইচডিএফসি ও কানারা ব্যাংক থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ট্রান্সফার করেন। দেশজুড়ে একাধিক অ্যাকাউন্টে এই টাকা ভাগ হয়ে যায়।

৪ সেপ্টেম্বর প্রতারকরা পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে মালহোত্রা বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম পোর্টালে অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে নেমেছে দিল্লি পুলিশ

অভিযোগ পাওয়ার পর দিল্লি পুলিশের আইএফএসও ইউনিট দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। জয়েন্ট কমিশনার রজনীশ গুপ্তা জানিয়েছেন, “আমরা অবিলম্বে অ্যাকশন নিয়েছি। প্রায় ১২.১১ কোটি টাকা ফ্রিজ করা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু বাকি টাকা একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।” এই চক্রটি অত্যন্ত প্রযুক্তি-সচেতন। তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য চুরি করে এবং ভুয়া ভয়েস ও ভিডিও কলের মাধ্যমে শিকারকে ফাঁদে ফেলে। পুলিশের ধারণা, এই চক্রটি মায়ানমার, কম্বোডিয়া বা লাওস থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অপরাধ কেবল আর্থিক নয়, এটি এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। কোনো সরকারি সংস্থা ফোন করে কাউকে গ্রেপ্তার বা তদন্তের জন্য টাকা দাবি করে না।

এই ঘটনা দিল্লির সবচেয়ে বড় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ স্ক্যাম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এ দেওয়া সতর্কতার প্রতিফলন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে প্রতারকরা বয়স্কদের লক্ষ্য করে ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা করছে।

সাবধান থাকুন, কারণ পরবর্তী শিকার আপনিও হতে পারেন। সন্দেহজনক কোনো কল এলে সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩০ নম্বরে যোগাযোগ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *