ঋণে ডুবেছে পাকিস্তান! বন্ধু চীনের ঋণে নাভিশ্বাস, সিপেক কি জিয়াংপিংয়ের স্বপ্নের ফাঁদ? – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
ইসলামাবাদ: বন্ধু দেশ চীনের স্বপ্নের প্রকল্প চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (CPEC) এখন পাকিস্তানের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান সরকার ৯.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েছে। নিজেদের ‘লৌহ-ভ্রাতা’ হিসেবে দাবি করা দুই দেশের সম্পর্কে এখন ফাটল ধরছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি চীন সফরে গিয়েও এই করিডর প্রকল্পের প্রশংসা করছেন, কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন পাকিস্তানকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল যে সিপেক দেশের উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে, কিন্তু বাস্তবে এর তেমন কোনো সাফল্য দেখা যায়নি। বছরের পর বছর কেটে গেলেও করিডরের নির্মাণকাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে, যার ফলে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ আলী হাসনাইনের মতে, এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অধিকাংশ প্রজেক্ট বিদেশি মুদ্রার ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে, সিপেক প্রকল্পের নিরাপত্তা এখন চীন ও পাকিস্তানের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারি যখন চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রশংসা করছেন, তখন তার দেশ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থ প্রমাণিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পাকিস্তান চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা ঠেকাতে পারছে না, যা চীনের ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। গত ৬ মার্চ চীনের রাষ্ট্রদূত প্রকাশ্যে বেলুচিস্তানে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে না পারার জন্য পাকিস্তানি নেতৃত্বকে তিরস্কার করেছিলেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের মতে, সিপেকের মোট ৯৫টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৩২টি এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে। চীনের চাপে পড়ে পাকিস্তান সরকার সিপেক প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে, যাতে চীনা নাগরিকদের বিএলএ-র (BLA) হামলা থেকে রক্ষা করা যায়। এত কিছু সত্ত্বেও গত জুলাই মাসে গোয়াদরে হামলায় চীনের ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার আহত হন। নিক্কেই এশিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেক প্রকল্প থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি চীন সিপেকের একটি রেলওয়ে আপগ্রেডেশন প্রজেক্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।
২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সিপেকের ওপর ১৪টি হামলা হয়েছে, যার ফলে ২০ জন চীনা নাগরিক নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়েছেন। এসব হামলার বেশিরভাগই বিএলএ-র মাধ্যমে হয়েছে। এছাড়াও খাইবার পাখতুনখোয়ায় টিটিপি-র (TTP) জঙ্গিরাও চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।