৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে আম্পায়ার, সৌরভ-দ্রাবিড়ের অভিষেক ম্যাচেও ছিলেন, কে এই ডিকি বার্ড? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

১৯৮৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে ধরা হয় সেই ফাইনালকে। মুখোমুখি ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন ইংল্যান্ডের ডিকি বার্ড। ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত এই নাম। মঙ্গলবার, ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব গভীর শোকের সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

কিংবদন্তি আম্পায়ার ডিকি বার্ডকে খেলার অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর আম্পায়ারিংয়ের সময় থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তিনি একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করে নেন। খেলাধুলার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম জীবনে তিনি একজন প্রতিভাবান ব্যাটার ছিলেন। ইয়র্কশায়ার এবং লেস্টারশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলেছিলেন। তবে চোটের কারণে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবন থেমে যায়। পরবর্তীকালে আম্পায়ার হিসেবেই তিনি ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নাম স্থায়ীভাবে লিখে গিয়েছেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ডিকি বার্ড ৬৬টি টেস্ট এবং ৬৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন। এর মধ্যে তিনটি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালও ছিল। আম্পায়ারিংয়ের সময় তাঁর শান্ত, দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আজও ক্রিকেট মহলে আলোচিত হয়। সাদা টুপি পরে আম্পায়ারিং করার বিশেষ ভঙ্গি তাঁকে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ১৯৯৬ সালে লর্ডসে তাঁর শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড এবং ভারতের খেলোয়াড়রা তাঁকে গার্ড অফ অনার দেন। সেই টেস্টেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাহুল দ্রাবিড়ের অভিষেক হয়।

ক্রিকেট এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৬ সালে এমবিই এবং ২০১২ সালে ওবিই সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে তিনি ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। ডিকি বার্ডের আত্মজীবনী ‘সীমানার বাইরে’ দশ লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের বাইরেও জনপ্রিয় হয়েছিল।

ডিকি বার্ড তাঁর রসবোধ এবং মানবিকতার জন্য পরিচিত ছিলেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে সহজভাবে মিশে যাওয়া, শিশুদের অটোগ্রাফ দেওয়া এবং আবেগ প্রকাশে পিছপা না হওয়া—এই সব বৈশিষ্ট্য তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। ১৯৭৩ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি টেস্টে বোমার হুমকির কারণে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দর্শকরা সবাই বেরিয়ে গেলেও তিনি শান্তভাবে মাঠের মাঝখানে বসে ছিলেন। পরে তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, “আমি ভেবেছিলাম মাঝখানেই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।” তাঁর এই ধরনের ঘটনাগুলোই ডিকি বার্ডকে শুধু একজন আম্পায়ার নয়, একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবেও স্মরণীয় করে রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *