৩৯ বছর পর সুবিচার পেলেন বৃদ্ধ, জীবন কেড়ে নিয়েছিল ১০০ টাকার মিথ্যা অভিযোগ – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ন্যায়বিচার পেতে এক ব্যক্তির জীবনের ৩৯টি বছর লেগে গেল! যাঁর জীবনের ৮০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে, সেই ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ জাগেশ্বর প্রসাদ অবধিয়াকে নিয়ে ফের নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে তিনি যে লড়াইটা চালিয়েছেন, তা এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। মাত্র ১০০ টাকার ঘুষ নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তাঁর জীবনটা কার্যত তছনছ করে দিয়েছে।

কে এই জাগেশ্বর প্রসাদ?

জাগেশ্বর প্রসাদ অবধিয়া ১৯৬৭ সাল থেকে মধ্যপ্রদেশ স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (এমপিএসআরটিসি) রায়পুরে বিল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মচারী হিসেবেই চিনতেন। কিন্তু ১৯৮৬ সালে তাঁর জীবনে হঠাৎ নেমে আসে এক কালো মেঘ।

কী হয়েছিল সেদিন?

১৯৮৬ সালে এক কর্মচারী অশোক কুমার ভার্মা জাগেশ্বর প্রসাদের কাছে একটি বকেয়া বিল পাশ করানোর জন্য চাপ দেন। কিন্তু জাগেশ্বর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো বিল পাশ করতে পারবেন না। পরের দিন অশোক কুমার প্রথমে ২০ টাকা এবং পরে দুটি ৫০ টাকার নোট তাঁর পকেটে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময় দুর্নীতি দমন শাখার একটি দল সেখানে উপস্থিত হয় এবং জাগেশ্বরকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নির্দোষ প্রমাণিত

এই ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় জাগেশ্বরের জীবনের এক দীর্ঘ ও কঠিন অধ্যায়। ২০০৪ সালে ট্রায়াল কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের জেল ও ১০০০ টাকা জরিমানা করে। এই রায়ের পর তাঁর চাকরি চলে যায়, বেতন কমে যায়, এমনকি সন্তানদের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর স্ত্রীও এই চাপ সহ্য করতে না পেরে মারা যান। কিন্তু জাগেশ্বর হার মানেননি। তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করে। বিচারপতি বি. ডি. গুরু তাঁর রায়ে বলেন, জাগেশ্বর ঘুষ চেয়েছেন বা নিয়েছেন, এমন কোনো প্রমাণ প্রসিকিউশন পক্ষ দিতে পারেনি। এই রায়ের পর জাগেশ্বর প্রসাদ অবশেষে সুবিচার পেলেন, কিন্তু তার জন্য তাঁকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯টি বছর বিসর্জন দিতে হলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *