শিকার দুই, খেলোয়াড় এক! পাকিস্তানের চালে কি মার্কিন-চিনের রণক্ষেত্র হবে ইসলামাবাদ? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ইসলামাবাদ কি শেষ পর্যন্ত নিজের কবর নিজেই খুঁড়তে চলেছে? আমেরিকা এবং চিনের সঙ্গে একই সঙ্গে ‘‌ডাবল গেম’‌ খেলার ফল কি হতে চলেছে পাকিস্তানের জন্য? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে।

একদিকে, চিনের সঙ্গে ‘আয়রন-ব্রাদার’‌ সম্পর্ক বজায় রেখেছে পাকিস্তান, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিককালে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান অসীম মুনির ও সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুসম্পর্ক চোখে পড়ার মতো। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানানো থেকে শুরু করে বালুচিস্তানের খনিজ সম্পদ ও ক্রিপ্টো ব্যবসায় আমেরিকান সংস্থাগুলোর প্রবেশের প্রস্তাব, সবকিছুই ইসলামাবাদের এই অবস্থানের দিকেই ইঙ্গিত করে। এমনকি, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাবও দেয় পাকিস্তান।

পাকিস্তানের এই দ্বৈত ভূমিকা নজর এড়াচ্ছে না বেজিংয়েরও। চিনের কাছে পাকিস্তান এখন শুধু একটি অনুগত রাজ্য মাত্র। বেজিংয়ের জন্য এটি অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতি। বিশেষ করে, যখন চীন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী এবং প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মানদীপ সিংয়ের মতে, পাকিস্তান উভয় সংকটে পড়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনার প্রস্থানের পর চীন যখন সে দেশের খনিজ সম্পদ নিয়ে আশাবাদী ছিল, তখন আমেরিকা পাকিস্তানে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের খনিজ সম্পদে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে চিন এবং আমেরিকার মধ্যে স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য, এবং নতুন রণক্ষেত্র হবে পাকিস্তান।

অন্যদিকে, কিছু পশ্চিমা ও পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞের মতে, আমেরিকা ও চিনের আগ্রহ পাকিস্তানের কাছে ভিন্ন হওয়ায় আপাতত কোনো সংঘাতের সম্ভাবনা নেই। সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি বলেছেন, আমেরিকা পাকিস্তানের ভিন্ন স্বার্থ পূরণ করে, কিন্তু চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য অত্যাবশ্যক।

এ বিষয়ে মার্কিন বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যানের যুক্তি, আমেরিকা এবং চিনের পাকিস্তানের কাছে ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা রয়েছে। আমেরিকা বাণিজ্যিক সুযোগ খুঁজছে, যেখানে চিনের আগ্রহ দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সম্পর্ক ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগে।

তবে বালুচিস্তানে আমেরিকার নজর থাকায়, দীর্ঘমেয়াদে এটি সংঘাতের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বালুচিস্তানের খনিজ সম্পদ চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু চীনা ভাষ্যকার মনে করেন, পাকিস্তানের এই হঠাৎ মার্কিন ঘেঁষা নীতি বেজিংয়ের জন্য একাধিক ঝুঁকি তৈরি করছে। চীনা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প গোপনে অসীম মুনিরের কাছ থেকে চীনের সামরিক গোয়েন্দা তথ্য আদায়ের চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়াও, মার্কিন-পাকিস্তান ক্রিপ্টো জোট চীনের অর্থনৈতিক নীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে বলে তাদের ধারণা। এই পরিস্থিতিতে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, পাকিস্তান আমেরিকার প্রতি ঝুঁকলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সংঘাত শুরু হতে পারে।

রাজনৈতিক কলামিস্ট এস এল কান্থান মনে করেন, চূড়ান্ত মার্কিন-চিন যুদ্ধের আগে পাকিস্তান উভয়পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা থেকে সাংবাদিক হওয়া আদিল রাজা বলেছেন, এটা ভাবা বোকামি হবে যে চীন তাদের নিজের উঠোনে, অর্থাৎ পাকিস্তানে, আমেরিকাকে অবাধ বিচরণ করতে দেবে। পাকিস্তানের এই ‘ডাবল গেম’‌ শেষ পর্যন্ত তার নিজের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *