এককালে সংসার চলত পুজোর ঢাকে, তিনিই আজ বিশ্বের সেরা ঢাকি! কে এই পদ্মশ্রী গোকুল দাস? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

একসময় পুজো মানেই ছিল ঢাকের বাদ্যি বাজিয়ে সামান্য রোজগার করে সংসার চালানো। অভাব আর সংগ্রামের সেই জীবন থেকে আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পদ্মশ্রী সম্মান। এই অসাধারণ যাত্রার নেপথ্যে কে? তিনি হলেন পদ্মশ্রী গোকুলচন্দ্র দাস, যাঁর ঢাকের বোলে এখন মুগ্ধ গোটা বিশ্ব।

একসময় দুর্গাপুজোর সময় মণ্ডপে-মণ্ডপে ঢাক বাজিয়ে যা রোজগার হতো, তা দিয়েই কেনা হতো পরিবারের সদস্যদের নতুন জামাকাপড়, মেটানো হতো ছোটদের আবদার। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে গোকুলচন্দ্র দাস বলেন, “আর্থিকভাবে আমাদের পরিবার একদম স্বচ্ছল ছিল না। কিন্তু একটা সময় থেকে আমি ঢাক বাজানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করি এবং পুরস্কারও পেতে থাকি।”

কিন্তু তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল এক বিদেশের ঘটনায়। একবার আমেরিকার এক দোকানে তিনি দেখতে পান একজন বিদেশিনী অত্যন্ত দক্ষ হাতে স্যাক্সোফোন, সোপ্রানো, ট্রাম্পেট বাজাচ্ছেন। সেই দৃশ্য তাঁর মনে এক নতুন ভাবনা জাগায়। তিনি ভাবেন, “যদি একজন বিদেশি নারীর পক্ষে এটা সম্ভব হয়, তাহলে আমাদের বাঙালি নারীরা কেন ঢাকের মতো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বঞ্চিত থাকবে?”

এই ভাবনা থেকেই তিনি ২০১০ সালে মাত্র ছয়জন মহিলাকে নিয়ে শুরু করেন দেশের প্রথম মহিলা ঢাকির দল। আজ সেই দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। এই উদ্যোগ কেবল ঢাকের ঐতিহ্যকে বাঁচানো নয়, বরং মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার এক নতুন পথ খুলে দিয়েছে। অনেক মহিলা সদস্য এখন নিজেদের উপার্জনে বাড়ি-গাড়ি কিনছেন, এমনকি পরিবারকেও আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন।

তবে আধুনিক ডিজে আর ব্যান্ডপার্টির দাপটে কি ঢাকের জৌলুস কমছে? এই প্রশ্নের উত্তরে গোকুলবাবু মনে করেন, এর জন্য উদ্যোক্তাদের অজ্ঞতাও অনেকাংশে দায়ী। তিনি বলেন, “দুর্গাপূজায় ফুল, ফল, নৈবেদ্য যেমন লাগে, তেমনই ঢাকও লাগে। কারণ ঢাকের বাদ্যি পুজোরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।”

পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ার পরেও তিনি ঢাক বাজানো বন্ধ করেননি, কারণ তিনি মনে করেন এই সম্মান তাঁর নয়, বরং ঢাকেরই প্রাপ্য। এই বাদ্যযন্ত্রই তাঁকে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে। আজও তিনি পুজোর সময় পরিবার থেকে দূরেই কাটান, তবে এখন তাঁর সেই ব্যস্ততা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও পৌঁছে গেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *