১ লাখ ডলার ফি থেকে ছাড়! তবুও কেন মার্কিন মুলুকে H-1B ভিসা হোল্ডারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

আমেরিকায় এইচ-1B ভিসাধারীদের গভীর উদ্বেগ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন H-1B ভিসার ফি ১ লাখ ডলার করার ঘোষণা করার পর থেকেই আমেরিকা ও ভারতে কর্মরত পেশাদারদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। যদিও পরে ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এই বর্ধিত ফি কেবল নতুন ভিসাপ্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে, পুরোনো ভিসা হোল্ডারদের জন্য নয়, তবুও তাদের উদ্বেগ কমছে না। মূলত ভারতীয়রাই এই ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী, কারণ গত অর্থ বছরে প্রায় ৭১ শতাংশ H-1B ভিসা ভারতীয় পেশাদারদের হাতে এসেছিল। ফলে এই নিয়মের যেকোনো পরিবর্তন তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে।

কেন এই ভয়?

H-1B ভিসা তিন বছরের জন্য জারি করা একটি অস্থায়ী ভিসা, যা আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষ দক্ষতার বিদেশি কর্মীদের নিয়োগের জন্য দেওয়া হয়। এটি ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এরপর গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয়, কিন্তু তার অপেক্ষার লাইন এত দীর্ঘ যে ২০ বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এই অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন-বিরোধী মনোভাব পুরনো ভিসা হোল্ডারদের মধ্যেও নতুন করে ভয় তৈরি করেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ‘গো ড্যাডি’ নামের একটি মার্কিন কো ম্পা নিতে কর্মরত ব্যাঙ্গালুরুর বাসিন্দা গায়ত্রী গত চার বছর ধরে H-1B ভিসায় আমেরিকায় আছেন। তিনি বলেন, “ভয় সবসময়ই থাকে। ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে অভিবাসীদের প্রতি কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে, তাতে যে কোনো সময় নতুন নিয়ম চলে আসতে পারে।” গায়ত্রী বর্তমানে স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য ভারতে যেতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ তাঁর আশঙ্কা, দেশে ফেরার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সমস্যা হতে পারে।

চাকরি হারালেই বিপদ?

H-1B ভিসার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো এটি চাকরির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। যদি কোনো কারণে আপনার চাকরি চলে যায়, তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে আপনাকে নতুন চাকরি খুঁজে বের করতে হবে, নয়তো দেশ ছাড়তে হবে। এই ৬০ দিনের মধ্যে যদি নতুন চাকরি না মেলে, তবে অন্য কোনো ভিসায় স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হয়। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। এরপর পুনরায় H-1B ভিসার জন্য আবেদন করতে হতে পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে নতুন ১ লক্ষ ডলারের ফি প্রযোজ্য হবে। তাই, অনেক কো ম্পা নিই হয়তো স্থানীয়দের নিয়োগের দিকে ঝুঁকবে।

স্বয়ং ভারতীয়রাই কি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে?

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অনেক ভারতীয় এই বর্ধিত ভিসা ফি-কে ভুল বলে মনে করছেন না। তাদের ধারণা, যত বেশি অভিবাসী আসবে, তত চাকরির প্রতিযোগিতা বাড়বে। অ্যামাজন, সিটি গ্রুপ, জেপি মরগান চেজ-এর মতো বড় কো ম্পা নিতে উচ্চ পদে কর্মরত অনেক ভারতীয় মনে করেন, যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে চাকরির সুযোগ কমে আসছে, তখন নতুন করে আরও লোক এলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

ভারত ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিক্রিয়া

বেশ কিছু ভারতীয় টেক কো ম্পা নি ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে চিন্তিত। তবে এনভিডিয়া ও ওপেন এআই-এর মতো বড় সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেও ইলন মাস্ক এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করছেন, যদিও তিনি একসময় H-1B ভিসার অন্যতম সমর্থক ছিলেন। এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। H-1B ভিসা শুধু অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয় নয়, বরং এটি উভয় দেশের অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক যেভাবে অভিবাসীদের “আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নেওয়া”র জন্য দায়ী করেছেন, তাতে স্পষ্ট যে ট্রাম্প প্রশাসন ভবিষ্যতে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত আমেরিকার অর্থনীতিতেই বুমেরাং হয় কিনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *