ট্রাম্পের ভারত-নীতিতে কি তবে বদল আসছে? তুর্কির প্রতি নরম, ভারতের প্রতি কঠোর কেন? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তখন থেকেই তিনি তুর্কির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রশংসা করে এসেছেন। এরদোয়ান ইউক্রেনকে ড্রোন দিচ্ছেন, আবার রাশিয়ার থেকে জ্বালানিও কিনছেন। তিনি ন্যাটো সদস্য, কিন্তু ব্রিকস সম্মেলনেও অংশ নেন। এই ধরনের বহু বৈপরীত্য তিনি একই সঙ্গে সামলে চলেছেন। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প তার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। এমনকি, নিজের প্রথম কার্যকালে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পর এরদোয়ানের একটি ব্যাঙ্ক সেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলেও ট্রাম্প তার ওপর জরিমানা চাপাতে দেরি করেছিলেন।

ভারতের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতি সম্পূর্ণ আলাদা। ভারত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের নীতি মেনে রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে এবং কোয়াডের পাশাপাশি ব্রিকসেও আছে। ট্রাম্প এই ধরনের কাজের জন্য ভারতের প্রতি কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন। এই বছরের ২০শে জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তে ভারতের স্বার্থে আঘাত এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে, যখন তুর্কির ওপর এই শুল্কের হার মাত্র ১৫ শতাংশ।

এরদোয়ানের প্রশংসা কেন?

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর, ২০১৯-এর পর, তুর্কির প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবার হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন। জো বাইডেনের সঙ্গে এরদোয়ানের সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনের ছিল। বাইডেন এরদোয়ানের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী শাসনের অভিযোগ করতেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তখন থেকেই এরদোয়ানের প্রশংসা করে এসেছেন। ২০১২ সালে ইস্তানবুলে ট্রাম্প টাওয়ারের উদ্বোধনের সময় ট্রাম্প এরদোয়ানের প্রশংসায় বলেছিলেন, “এরদোয়ান একজন খুব ভালো মানুষ। তিনি তুর্কির জনগণের খুব ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করছেন।” রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও তিনি এরদোয়ানকে নিজের বন্ধু এবং একজন চমৎকার নেতা বলে উল্লেখ করেছিলেন।

যদিও ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও প্রশংসা করেন এবং তাকে বন্ধু বলেন। তবে এই বন্ধুত্ব ভারতের স্বার্থে আঘাত আটকাতে পারেনি। প্রথমবার ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন, আমেরিকা ন্যাটো সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য তুর্কিকে এফ-৩৫ ফাইটার জেট প্রোগ্রাম থেকে বাদ দিয়েছিল।

২৫শে সেপ্টেম্বর এরদোয়ানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এরদোয়ানের হোয়াইট হাউস সফরের কথা ঘোষণা করেন। তিনি লেখেন, “আমরা তুর্কি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তি নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে বড় আকারের বোয়িং বিমান কেনা এবং এফ-১৬ চুক্তি। আমরা আশা করছি সবকিছু ইতিবাচক থাকবে।” এরদোয়ান জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই কার্যকালের মধ্যেই ধাপে ধাপে এফ-৩৫-এর ডেলিভারি শুরু হবে।

ভারতের প্রতি কঠোরতা ও তুর্কির প্রতি নরম মনোভাবের কারণ

গত বছর তুর্কি তার মোট গ্যাস আমদানির ৪১ শতাংশ এবং তেলের ৫৭ শতাংশ রাশিয়া থেকে কিনেছিল। এই পরিস্থিতিতেও ট্রাম্প তুর্কির প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, তুর্কির ভৌগোলিক অবস্থান এর পেছনে একটি বড় কারণ। তুর্কি ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে একটি কৌশলগত সেতু হিসাবে কাজ করে। এই কারণেই দেশটি ন্যাটোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তুর্কি কৃষ্ণ সাগরের প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ করে, যা এর কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *