আচমকাই ভারতের পরমাণু বোমাভাণ্ডার বৃদ্ধির কারণ কী? কেন চিন্তায় চীন-পাকিস্তান? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। ভারত এমন কিছু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, যা চীন ও পাকিস্তানের যেকোনো প্রান্তে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করতে সক্ষম। সম্প্রতি অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষা এবং তার উন্নত MIRV সংস্করণ শুধু একটি অস্ত্র নয়, বরং এক কৌশলগত বার্তা যে ভারত এখন কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই।

ভারত, চীন ও পাকিস্তান—এই তিন প্রতিবেশী দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পরমাণু অস্ত্রাগারের অংশ। চীনের কাছে প্রায় ৬০০টি, পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি এবং ভারত সম্প্রতি তার পরমাণু ওয়ারহেডের সংখ্যা ১৮০-তে উন্নীত করেছে। তিনটি দেশেরই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে ভারত ও চীনের রয়েছে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা। অন্যদিকে, পাকিস্তানের এখনো সমুদ্র-ভিত্তিক উৎক্ষেপণের সুবিধা নেই। অর্থাৎ, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভারত ও চীন পরমাণু ত্রিকোণ সম্পূর্ণ করতে পারে।

ইন্দো-প্যাসিফিক ডিফেন্স ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত অগাস্ট, ২০২৫-এ ওড়িশার উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষা করে। এটি একটি তিন-পর্যায়ের ইন্টারমিডিয়েট মিসাইল সিস্টেম, যার পাল্লা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি। এই ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই চীন, পাকিস্তান এবং এশিয়ার বড় বড় অংশকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। অর্থাৎ, দিল্লি থেকে বেজিং বা সাংহাই এখন শুধু একটি বোতামের দূরত্বে। তবে আসল গেম চেঞ্জার হলো এর MIRV ভ্যারিয়েন্ট। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ক্ষেপণাস্ত্র একইসাথে একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং শত্রুর একাধিক অবস্থানকে একই সময়ে ধ্বংস করতে সক্ষম। ২০১৪ সালে ভারত এর সফল পরীক্ষা করে বিশ্বকে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে, আমরা শুধু পাল্লার দিক থেকে নয়, বরং নির্ভুলতা ও একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছি।

এরপর, ২৫ সেপ্টেম্বর ভারত অগ্নি-প্রাইম ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা একটি উন্নত মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই পরীক্ষাটি করা হয়েছে রেল-ভিত্তিক মোবাইল লঞ্চার সিস্টেম থেকে। সহজ ভাষায়, ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা একটি ট্রেন থেকে করেছে। এই সাফল্যকে অভূতপূর্ব উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশ এবং ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান।

একটি রেলকার থেকে অগ্নি-প্রাইম-এর এই উৎক্ষেপণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ব্যবহারকারীকে সারা দেশে ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং কম দৃশ্যমানতার সাথে স্বল্প সময়ে উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম করে তোলে। সাধারণত অগ্নি-প্রাইম-এর মতো উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বেশ বড় হয় এবং সহজে বহনযোগ্য নয়। তাই এগুলোকে প্রচলিতভাবে নির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। যদিও এখন কিছু ক্ষেপণাস্ত্র গাড়িতে স্থাপন করা হচ্ছে, খুব কম দেশই এই ক্ষেপণাস্ত্র ট্রেনে স্থাপন করতে পেরেছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষেপণাস্ত্রকে স্থির সাইলোতে রাখলে শত্রুর হামলার ঝুঁকি বাড়ে। তাই, সেগুলোকে চলমান বস্তুতে স্থানান্তরিত করা হলে হামলার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *