তিন পরাশক্তির দ্বন্দ্বে ভারতের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ, বদলে যাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সম্পর্কের সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এক সময়ের পরম মিত্র আমেরিকা এবং ভারত এখন নিজেদের বাণিজ্যনীতি নিয়ে মুখোমুখি। আবার চিরশত্রু চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সহজ করার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের পুরনো সখ্য আরও মজবুত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বিদেশনীতিতে এক নতুন কৌশলগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় একাধিক ফ্রন্টে কাজ করতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং এইচ১-বি ভিসার ফি ৮৮ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় রপ্তানি ধাক্কা খেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মোদি সরকার বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছে। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক জাপান এবং চীন সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও এই নতুন কৌশলেরই ইঙ্গিত দেয়।

ট্রাম্প চান ভারত তাদের কৃষিপণ্য বাজার আমেরিকার জন্য খুলে দিক এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক। কিন্তু ভারত তাতে রাজি নয়। নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক স্বাধীনতা বজায় রাখতে ভারত এই ধরনের চাপ মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প এই বছরের শেষে অনুষ্ঠিত হতে চলা কোয়াড (QUAD) বৈঠকে যোগ দেবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। অথচ চীনকে প্রতিহত করতে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মিলে এই জোট গঠন করেছে আমেরিকা।

অন্যদিকে, ভারত ও চীন উভয়ই দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত উপস্থিতি বাড়াতে আগ্রহী। এই অঞ্চলে বিশাল তেলের ভান্ডার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত মহাসাগরের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে চীন, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এক শীতল প্রতিযোগিতা চলছে। এর মোকাবিলায় ভারত নিজেদের ‘ডায়মন্ড নেকলেস’ কৌশল নিয়ে কাজ করছে, যা চীনের ‘স্ট্রিং অফ পার্ল’ কৌশলের পাল্টা জবাব। ইরান থেকে শুরু করে মালদ্বীপ ও সেশেলস পর্যন্ত ভারত নিজেদের সামরিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব বিস্তার করছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিকেই চীন ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট ভারতের তুলনায় পাঁচ গুণেরও বেশি। চীন তাদের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মতো মেগা প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করছে, যা ভারতকে ঘিরে ফেলার কৌশল বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা, পাকিস্তানের গোয়াদর এবং নেপাল ও মায়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নয়াদিল্লির জন্য চিন্তার কারণ। এই অবস্থায় নিজেদের টিকে থাকার জন্য ভারতকে আরও কঠোর ও কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *