২৪ ফুট লম্বা ‘দুর্গা’ মূর্তি! এ কেমন বিলুপ্তি, যা দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন কলকাতার মানুষ? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

কলকাতার দুর্গাপূজা মানে শুধু শাস্ত্রীয় আচার নয়, শিল্প ও বার্তার এক জোরালো মঞ্চও বটে। এই বছর, ক্ষুদিরাম কলোনির পূজা মণ্ডপ ‘বিলুপ্তি’ (Extinction) নামক এক সাহসী থিম নিয়ে শহরবাসীর নজর কেড়েছে। কিন্তু বিলুপ্তির মাঝেও এক সুবিশাল ২৪ ফুটের মূর্তি কী বার্তা দিচ্ছে, তা দেখতেই কৌতূহলী জনতা ভিড় জমাচ্ছেন।

এই মণ্ডপের প্রধান আকর্ষণ হলো— কর্ণাটকের প্রখ্যাত ১১২ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী সালুমারাদা থিম্মাক্কার বিশাল প্রতিকৃতি, যিনি হাজার হাজার বটগাছ লাগিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। আয়োজকরা থিম্মাক্কাকে দেবী দুর্গার রূপ দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কমিটির সভাপতি প্রণব দে জানান, এই নারী ‘মা’ রূপে সবাইকে রক্ষা করছেন। তাদের মতে, এটি ভক্তির সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার এক পবিত্র দায়িত্ববোধের মেলবন্ধন।

মণ্ডপে প্রবেশ করলেই দর্শনার্থীরা এক পরিবর্তনশীল পৃথিবীর বিপদ দেখতে পাচ্ছেন। একটি বিশাল তিমি তার পিঠে মানব সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ বহন করছে, আর একটি গণ্ডার বিলুপ্তির পথে থাকা প্রজাতির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। দেওয়ালের ম্যুরালগুলো আদিবাসী সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া জীবনযাত্রার সংগ্রাম তুলে ধরছে। এই পুরো আয়োজনটি শুধুমাত্র সজ্জা নয়, এটি মানুষকে হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করছে।

থিম শিল্পী সম্রাট ভট্টাচার্য জানান, আধুনিকীকরণের কারণে পৃথিবীর যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, সেই ভয় থেকেই এই ভাবনার জন্ম। তিনি বলেন, “আমাদের থিমের মূল ভাবনা হলো বিলুপ্তি। আধুনিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পৃথিবীকে ধ্বংস করতে শুরু করেছে। আমরা সেই ক্ষতিটা তুলে ধরতে চেয়েছি, কিন্তু থিম্মাক্কার মাধ্যমে শক্তিও দেখাতে চেয়েছি, যিনি নিজের জীবন গাছের জন্য উৎসর্গ করেছেন।” এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি শেষ করতে প্রায় দুই মাস সময় লেগেছে বলে তিনি জানান।

দুর্গাপূজা ধর্মীয় তাৎপর্যের বাইরেও সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব এবং শিল্প-সংস্কৃতির উদযাপন হিসেবে বিবেচিত। ঢাকের শব্দ ও আনন্দের আবহে এই অভিনব ভাবনা ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীদের মনে সাড়া ফেলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *