বৃষ্টির তোয়াক্কা নেই! চতুর্থীর দুপুরেই মণ্ডপে জনজোয়ার, জল-কাদা পেরিয়ে ঠাকুর দেখছে কলকাতা

কলকাতা: বৃষ্টি থোড়াই কেয়ার! শরৎ এলেও আকাশের মনমেজাজ যেন এখনও শ্রাবণে। চতুর্থীর দুপুর থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নামল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। কিন্তু এই বৃষ্টিই যেন উৎসবপ্রেমী বাঙালির কাছে এক নতুন চ্যালেঞ্জ। ম্যাডক্স স্কোয়ার থেকে দেশপ্রিয় পার্কের দিকে মানুষের যে ঢল নেমেছিল, আকাশের চোখরাঙানি তাকে বিন্দুমাত্র থামাতে পারেনি।

প্রথমে টিপটিপ, তারপর ঝিরঝির, শেষে মুষলধারে বৃষ্টি। ফাঁকা স্টলের নিচে আশ্রয় নেওয়া এক খুদের কাঁদো কাঁদো মুখ, “বৃষ্টি বলে কালকের মতো বাড়ি চলে যাব না আমি। বাড়ি ঢুকলেই বৃষ্টি থেমে যায়।” শিশুটির এই দৃঢ় বার্তার পরই যেন প্রকৃতির খেয়ালবদল! কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝলমলে রোদ। ভেজা রাস্তা চকচক করছে, আর ভিড় যেন আচমকা নেমে এলো রাজপথে।

ভিজে জামা, চুল থেকে টপটপ করে ঝরা জল—কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। তরুণীরা হেয়ার ব্যান্ড খুলে চুল এলো করেই চললেন, ব্যান্ড-ক্লিপ চলে গেল প্রেমিকদের দায়িত্বে। ভিড় যখন ত্রিধারা থেকে বালিগঞ্জ কালচারালের দিকে এগোচ্ছে, শোনা গেল উল্লাস: “এমন ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়ায় ঠাকুর দেখার কিন্তু মজা আছে বস!”

দক্ষিণ কলকাতার পাশাপাশি উৎসাহ-উদ্দীপনার একই চিত্র উত্তর কলকাতায়। হাতিবাগান সর্বজনীন, সিকদার বাগান, কুমোরটুলি পার্ক, আহিরীটোলা, নলিন সরকার স্ট্রিটেও উপচে পড়া ভিড়। বৃষ্টি নামতেই ব্যাগ থেকে বের হলো ছাতা, রেনকোট। কিন্তু জল জমলেও থোড়াই কেয়ার! অনেকে জুতো ছেড়ে চটি পরেছেন, কেউবা চটি খুলে জমা জলে পা দিয়েই শাড়ির আঁচল কোমরে পেঁচিয়ে বা প্যান্ট গুটিয়ে এগিয়ে চলেছেন ঠাকুর দেখতে। শোভাবাজার রাজবাড়িতে এক পশলা বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে গেলেও তাতে দমে যাওয়ার লোক কম।

শ্রীভূমিতে টিপটিপ বৃষ্টি চলছেই। ছাতা হাতে প্রেমিকাকে আড়াল করে দিয়েছেন প্রেমিক, কারণ মেকআপ ধুয়ে গেলে বাড়ি ফেরার হুমকি দিয়েছেন বান্ধবী।

চতুর্থীর সকাল থেকেই এই ভিড় প্রমাণ করে দিল, উত্তর-দক্ষিণ দু’পক্ষই বলছে: বৃষ্টি যতই ভিলেন হোক, পুজোর আমেজ ধরে রেখেছি আমরাই! ফুচকা-ঠান্ডা পানীয়ের ভিড়ে অনেকে বলছেন, “বৃষ্টি পড়ুক, জল জমুক, বাড়ি কিছুতেই ফিরব না। চলে যাব সিনেমা দেখতে!” আর প্রবীণদের অভয়বাণী: “দুর্গার তো দুর্গতিনাশিনী। চিন্তা কী?” বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই চলছে বাঙালির উৎসব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *