ভাঙা মূর্তির ‘শাপমোচন’ করতে নতমস্তক শাহ? বিদ্যাসাগরকে প্রণাম করে বিরাট বিতর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ছয় বছর আগে, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, ২০১৯ সালের ১৫ মে। বিজেপির তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শো শেষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বাঙালি অস্মিতার এই প্রতীককে আসাম্মান করার সেই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে আজও একটি বড় বিতর্কিত অধ্যায়।

শুক্রবার সকালে সেই ঘটনারই যেন ‘শাপমোচন’ করতে চাইলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) দুর্গাপূজার উদ্বোধনে এসে তিনি ‘বর্ণপরিচয়’-স্রষ্টার প্রতিকৃতির সামনে মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানান। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাঁর এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট হতেই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।

তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়া

২০১৯ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে গেরুয়া শিবিরের তাণ্ডবের পর বিজেপি কোনও অনুশোচনা প্রকাশ করেনি বা ক্ষমাও চায়নি। ভোটের আগে শাহের এই বিলম্বিত শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে তাই রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “এই বাংলায় বিদ্যাসাগরের ধর্মনিরপেক্ষ মানবিকতার আদর্শকে যারা বিশ্বাস করে না, কলকাতার বুকে তাঁরই মূর্তি যারা ভূলুণ্ঠিত করে, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিকে যারা প্রতিনিয়ত অপমান করে, তাদের কোনও স্থান নেই।”

অন্যদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে এদিন বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙা মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ওদের (বিজেপি) আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ওই মূর্তি ভাঙা কাণ্ডে জড়িতরা আজও বিজেপিতেই আছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, জানতে চায় গোটা বাংলা!”

শাহের মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

ইজেডসিসিতে অমিত শাহ বিদ্যাসাগরের জীবন উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ করে বলেন, “বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ব্যাকরণ তথা মহিলা শিক্ষার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের সমগ্র জীবন সমর্পিত করেছেন।”

তবে, বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে শাহের জ্ঞান নিয়ে এদিন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নবরাত্রির সঙ্গে কলকাতার দুর্গাপূজাকে মিলিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলার প্রত্যেক ব্যক্তি ৯ দিন ধরে শক্তিপুজোয় নিজেকে সমর্পিত করেছে।” বাঙালির দুর্গাপূজার বোধন যে ষষ্ঠীর দিন হয়, সেই তথ্য সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচনের আগে বাঙালি সাজার এই ‘মরিয়া চেষ্টা’ অমিত শাহের। তবে ছ’বছর আগের মূর্তি ভাঙার ক্ষত মোচন করা সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্ন এখন বাংলার রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *