বিদেশী ব্যাঙ্ক সরে দাঁড়াতেই LIC-র ৩.৯ বিলিয়ন ডলার Adani-কে দিয়েছে মোদী সরকার: রিপোর্ট – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
বিদেশী ব্যাঙ্কগুলি যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল, ঠিক সেই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন (LIC)-এর মাধ্যমে গৌতম আদানির ঋণগ্রস্ত সংস্থাকে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩২,৫০০ কোটি টাকা) দিয়ে সাহায্য করার কৌশল তৈরি করেছিল মোদী সরকার। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এই অনুসন্ধানে প্রকাশ, মে ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক, তার আর্থিক পরিষেবা বিভাগ (DFS), LIC এবং নীতি আয়োগের মধ্যে একটি বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে সমন্বয় করা হয়। এই কৌশলের লক্ষ্য ছিল আদানি গোষ্ঠীর বন্ড এবং ইক্যুইটিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালা। এর মধ্যে আদানি পোর্টস-এর জন্য $৫৮৫ মিলিয়ন বন্ড ইস্যু ছিল, যার সম্পূর্ণ অর্থ একাই জুগিয়েছিল LIC।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বন্ড ইস্যুর ঘোষণা আসে মে মাসের ৩০ তারিখে, যা ছিল পুরোনো ঋণ পরিশোধের জন্য আদানি পোর্টস-এর এই অর্থ সংগ্রহের মাস। সমালোচকদের মতে, সরকারি তহবিলের এমন ব্যবহার ছিল অপপ্রয়োগ।
আভ্যন্তরীণ নথিগুলি দেখায়, এই পদক্ষেপের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল আদানির প্রতি ‘আস্থা জ্ঞাপন’ এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা, যদিও তার আগের বছরই আদানি গোষ্ঠীর ঋণ ২০% বেড়েছিল। এই সময়েই মার্কিন বিচার বিভাগ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) কর্তৃক আদানি এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ এবং জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। যদিও আদানি এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও, ২০২৩ সালে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছিল। যদিও ভারতীয় বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি (SEBI) সেই অভিযোগগুলির মধ্যে দু’টিকে খারিজ করে দেয়। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ বিতর্কের পরে একাধিক আমেরিকান এবং ইউরোপীয় ব্যাঙ্ক আদানি গোষ্ঠীকে ঋণ দিতে দ্বিধা করছিল।
এই পরিস্থিতিতেই ভারতীয় কর্মকর্তারা DFS নথিতে আদানিকে ‘দূরদর্শী উদ্যোক্তা’ হিসাবে বর্ণনা করেন, যাঁদের বন্দর, জ্বালানি এবং পরিকাঠামো ব্যবসা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, কোটি কোটি ভারতীয়—যাদের অনেকেই নিম্ন আয়ের—যাদের বীমা করে LIC, তারা একটি রাজনৈতিকভাবে-সংযুক্ত বেসরকারি সংস্থায় এত বেশি বিনিয়োগের ফলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
স্বাধীন বিশ্লেষক হেমিন্দ্র হাজারি বলেছেন, একটি বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থায় LIC-এর এত বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ‘অস্বাভাবিক’। তিনি মন্তব্য করেন, “যদি LIC-এর কিছু হয়… তবে সরকার ছাড়া অন্য কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারবে না।”
বিরোধীদের দাবি, এই ‘বেইলআউট’ ঘটনাটি ভারতে কর্পোরেট-রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ, যেখানে আদানির ভাগ্য সরকারের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি এবং এই ঝুঁকি শেষ পর্যন্ত বহন করতে হবে সাধারণ করদাতাদের। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।
জবাবে, আদানি গোষ্ঠী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের ভূমিকার কথা ‘সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার’ করেছে, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করে জানিয়েছে, মোদীর জাতীয় নেতৃত্বে আসার আগেও তাদের উত্থান শুরু হয়েছিল।