নিয়ান্ডারথাল বিলুপ্তি কি যৌন সম্পর্কের জেরেই? চমকপ্রদ তথ্য দিল নতুন গবেষণা – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

হোমো সেপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ) এবং নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে প্রজননগত সম্পর্কের জেরেই কি বিলুপ্ত হয়েছিল নিয়ান্ডারথালরা? বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন যে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে এই দুই মানব প্রজাতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—দুই প্রজাতির মধ্যে হওয়া সেই যৌন সম্পর্কই নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্তির প্রধান কারণ হয়ে থাকতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, হোমো সেপিয়েন্স এবং নিয়ান্ডারথালদের জিনগত অসামঞ্জস্য সংকর বা ‘হাইব্রিড’ নারীদের গর্ভধারণে বাধা দিত। রক্তকণিকা-সম্পর্কিত জিনগত বৈচিত্র্যের কারণে মা ও ভ্রূণের মধ্যে অমিল সৃষ্টি হতো, যার ফলে গর্ভপাত বা গর্ভধারণ ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা ঘটত। এই ধীরে কার্যকর হওয়া জৈবিক সমস্যাই নিয়ান্ডারথালদের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছিল এবং তাদের বিলুপ্তির পথ প্রশস্ত করে।

বিজ্ঞানীরা জেনেটিক পরীক্ষায় আধুনিক মানুষের জিনোমে আজও নিয়ান্ডারথালের প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ ডিএনএ-এর অস্তিত্ব পেয়েছেন, যা দুই প্রজাতির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের প্রমাণ দেয়। তবে এই গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে সেই সম্পর্ক সবসময় সফল ছিল না। নিয়ান্ডারথালরা প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়। এতদিন ধারণা ছিল, হোমো সেপিয়েন্সদের উন্নত বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতার কারণেই তারা বিলুপ্ত হয়েছে।

কিন্তু এই নতুন ব্যাখ্যা মানব ইতিহাসের এক জটিল দিক তুলে ধরছে। গবেষকদের মতে, প্রজাতি বিলুপ্তি সবসময় যুদ্ধ বা পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফল নাও হতে পারে; এটি জৈবিক ও প্রজননগত জটিলতার কারণেও ঘটতে পারে। সংকর প্রজন্মের নারীদের মধ্যে প্রজনন ব্যর্থতা ধারাবাহিকভাবে ঘটলে, কয়েক হাজার বছরের মধ্যে একটি প্রজাতি প্রজনন ক্ষমতার অভাবে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে পারে। নিয়ান্ডারথালদের পতন হয়তো তাদের শরীরের ভেতরের জিনগত সংঘর্ষের ফল, যা মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *