চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো এত বিখ্যাত কেন? কৃষ্ণনগরেই প্রথম আরাধনা শুরু হয়েছিল – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

কলকাতার দুর্গাপূজা বা বারাসাতের কালীপূজার মতো বাংলার উৎসব মানচিত্রে জগদ্ধাত্রী পূজা মানেই চন্দননগর। শহরের চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, বিশাল প্রতিমা ও মণ্ডপের জাঁকজমক প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দর্শককে মুগ্ধ করে। তবে ইতিহাস বলছে, বাংলায় প্রথম জগদ্ধাত্রী আরাধনা শুরু হয়েছিল নদীয়ার কৃষ্ণনগরে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে এই পূজার সূচনা।

কৃষ্ণনগরে সূচনা, চন্দননগরে খ্যাতি

নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তন করেন। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, ১৭১০ সালে নবাবের হাতে বন্দি থাকার কারণে তিনি দুর্গাপূজার সময় মায়ের আরাধনা করতে পারেননি। সেই সময় কারাগারেই দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে তাঁকে দেখা দেন এবং কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে পূজার নির্দেশ দেন। রাজা মুক্তি পাওয়ার পর দেবীর নির্দেশ মতোই কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে এই পূজা শুরু করেন। পরে রাজবাড়ির দেখাদেখি কৃষ্ণনগরের অন্যান্য স্থানেও পূজার প্রচলন হয়।

চন্দননগরের উত্থান

কৃষ্ণনগরে শুরু হলেও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা জনপ্রিয়তা ও জাঁকজমকের নিরিখে স্বতন্ত্র স্থান করে নিয়েছে। চন্দননগরে পুজো শুরুর বিষয়ে একাধিক মত প্রচলিত।

১. দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে চন্দননগরে প্রথম জগদ্ধাত্রী আরাধনার আয়োজন করেন। তিনি ছিলেন ফরাসি সরকারের স্থানীয় দেওয়ান।

২. অন্য একটি মত অনুযায়ী, কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারামের বিধবা কন্যা ১৭৬২ সালের কাছাকাছি সময়ে ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় প্রথম পুজো শুরু করেন, যা পরে সর্বজনীন রূপ নেয় এবং তেঁতুলতলা পুজো নামে পরিচিত হয়।

বিশাল প্রতিমা ও আলোকসজ্জার আকর্ষণ

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রধান আকর্ষণ হল এর সুবিশাল প্রতিমা, মণ্ডপের থিমভিত্তিক সজ্জা এবং বিশ্বমানের আলোকসজ্জা। বিশাল রূপ, টানা চোখ, চার হাতে অস্ত্র ও অলঙ্কারে সজ্জিত দেবী প্রতিমা এক অনন্য আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করে। সময়ের সাথে সাথে এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সাংস্কৃতিক মিলনমেলা এবং ঐতিহ্যের অসাধারণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে। চন্দননগরের এই জাঁকজমকই কৃষ্ণনগরের আদি ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে এটিকে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *