টাওয়ারে ২৩৬ সিঁড়ি ডিঙিয়ে ‘সময়’ বাঁচান মহেন্দ্র গুপ্ত – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ইউনিভার্সিটি অফ মুম্বইয়ের ফোর্ট ক্যাম্পাসে অবস্থিত প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো রাজাবাই টাওয়ারের ঐতিহাসিক ঘড়িটি আজও সচল রাখার নেপথ্যে রয়েছেন একজন মানুষ। তিনি মহেন্দ্রপ্রসাদ গুপ্ত, পেশায় এক বিদ্যুৎকর্মী, যিনি গত দশ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে এই ঐতিহ্যবাহী ঘড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন।

২৮০ ফুট উঁচু এই টাওয়ারের চূড়ায় অবস্থিত ঘড়িটির ‘সময়’ সঠিক রাখতে মহেন্দ্র গুপ্তকে প্রতিদিন সকালে ২৩৬টি সরু সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠতে হয়। ১৮৭৮ সালে নির্মিত এবং লন্ডনের বিগ বেনের অনুপ্রেরণায় তৈরি এই টাওয়ারের নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ স্থপতি স্যার জর্জ গিলবার্ট স্কট। সেই সময়ে স্টকব্রোকার প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ তাঁর দৃষ্টিহীন মা রাজাবাইয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই টাওয়ার নির্মাণ করান। দৃষ্টিহীন রাজাবাই ঘণ্টার শব্দ শুনে সময় অনুমান করতেন, সেই কারণেই তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছনোর মতো শক্তিশালী ঘণ্টাধ্বনি যুক্ত ঘড়ি তৈরি করা হয়েছিল।

মহেন্দ্র গুপ্ত জানান, এই বিশাল ঘড়িটি পুরোপুরি মানুষের শক্তিতেই চলে। এটির ওজন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলো। বিদ্যুৎ ছাড়াই এটি ওজনের ভারসাম্যে চালু থাকে। তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমি ২৩৬ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠি, পরিষ্কার করি, তেল দিই, আর লিভার ঘুরিয়ে ঘড়ি চালু করি। এটা শুধু কাজ নয়, এক রকম সাধনা।”

২০১৮ সালে ইউনেসকো রাজাবাই টাওয়ারকে মুম্বইয়ের ভিক্টোরিয়ান গথিক ও আর্ট ডেকো ভবনগুলির সঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে। একসময় টাওয়ারের ১৪টি ঘণ্টা বাজলেও এখন বাজে মাত্র পাঁচটি। তবে প্রতি ১৫ মিনিটে এই ঘণ্টা এখনও বেজে ওঠে, যা মুম্বই শহরবাসীকে সময়ের জানান দেয়।

শহর যখন দ্রুত বদলাচ্ছে, তখন মহেন্দ্র গুপ্তের এই নিবেদন মনে করিয়ে দেয় যে সময় কেবল ঘড়িতে নয়, মানুষের হাতের যত্নেও থামে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *