ক্যান্সার থেকে হার্ট অ্যাটাক! সুস্থ থাকতে বছরে একবার অবশ্যই করান এই ১০টি জরুরি টেস্ট – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ হলেও, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু হলে এটিকে পরাজিত করা সম্ভব। সমস্যা হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে কোনো উপসর্গ ছাড়াই নীরবে ক্যান্সার বাসা বাঁধে এবং যখন ধরা পড়ে তখন চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায়। শুধুমাত্র ক্যান্সার নয়, হার্ট, কিডনি বা লিভারের সমস্যাও একইভাবে বাড়ে।
এই কারণে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন যে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই বছরে অন্তত একবার কিছু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। এই পরীক্ষাগুলি রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই যেকোনো শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। সময়মতো রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয় এবং খরচও কমে। সবচেয়ে ভালো দিক হল, এই বেসিক টেস্টগুলি খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়।
প্রাথমিক ও জরুরি স্বাস্থ্য পরীক্ষা (২৫ বছর বা তার বেশি):
১. সিবিসি (CBC) বা সম্পূর্ণ রক্ত গণনা: এটি সবচেয়ে মৌলিক রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা (RBCs), শ্বেত রক্তকণিকা (WBCs) এবং প্লেটলেটসের সংখ্যা জানা যায়। এটি রক্তাল্পতা, সংক্রমণ বা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রদাহ চলছে কিনা তার প্রাথমিক ধারণা দেয়। বছরে একবার এই পরীক্ষা করালে অনেক রোগের প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়ে।
২. এলএফটি (LFT) বা লিভার ফাংশন টেস্ট: এই পরীক্ষাটি নিশ্চিত করে যে আপনার লিভার সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। এটি লিভার এনজাইম এবং প্রোটিনের মাত্রা পরীক্ষা করে। লিভারে কোনো সংক্রমণ (যেমন হেপাটাইটিস), প্রদাহ বা ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হচ্ছে কিনা, তার ইঙ্গিত LFT-তে পাওয়া যায়।
৩. কেএফটি (KFT) বা কিডনি ফাংশন টেস্ট: এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় কিডনি রক্তকে কতটা দক্ষতার সঙ্গে ফিল্টার করছে। এতে ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া এবং ইউরিক অ্যাসিডের মতো উপাদানের মাত্রা মাপা হয়। এই মাত্রা বেশি হলে বোঝা যায় কিডনিতে চাপ বাড়ছে বা তা সঠিকভাবে কাজ করছে না। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের নিয়মিত এই পরীক্ষা করানো আবশ্যক।
৪. থাইরয়েড প্রোফাইল: থাইরয়েড প্রোফাইল শরীরের থাইরয়েড হরমোন (T3, T4, TSH)-এর ভারসাম্য পরীক্ষা করে। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ওজন, মেজাজ, মেটাবলিজম এবং হৃদস্পন্দনকে প্রভাবিত করে। মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, তাই বছরে একবার এই পরীক্ষা জরুরি।
৫. লিপিড প্রোফাইল (কোলেস্টেরল): এই পরীক্ষাটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এর মাধ্যমে ভালো (HDL) ও খারাপ (LDL) কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা জানা যায়। LDL বা ট্রাইগ্লিসারাইডসের মাত্রা বেশি হলে হৃদধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। ৩০ বছর বয়সের পর সকলেরই এটি নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত।
ক্যান্সার মার্কার টেস্ট (৪০ বছর বা তার বেশি):
ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্কীকরণ চিহ্ন হিসেবে এই পরীক্ষাগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পুরুষদের জন্য:
৬. পিএসএ (PSA) – প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন: এই পরীক্ষাটি প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ৭. CA 19.9: অগ্ন্যাশয়ের (Pancreas) ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত মার্কার। ৮. CA 72.4: পাকস্থলী (Stomach) ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়।
মহিলাদের জন্য:
৯. CA-125: ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার নির্ণয়ে সহায়ক। ১০. CA 15.3: স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত মার্কার, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
১১. সিইএ (CEA) – কার্সিনোইমব্রায়োনিক অ্যান্টিজেন (উভয়ের জন্য): এই পরীক্ষাটি শরীরের যেকোনো অংশে ক্যান্সারের উপস্থিতি বা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা জানতে সাহায্য করে। নারী-পুরুষ উভয়েই এটি করাতে পারেন।
বছরে একবার এই পরীক্ষাগুলি করানো জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসা কার্যকর, সহজলভ্য এবং কম ব্যয়বহুল হয়। তবে মনে রাখতে হবে, এই তথ্য সাধারণ সচেতনতার জন্য। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।