সোনার দামে রেকর্ড পতন, টানা ৯ সপ্তাহের উত্থানে কেন ব্রেক – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামে এই সপ্তাহে প্রায় ৩ শতাংশের বড়সড় পতন নথিভুক্ত হয়েছে। টানা ন’সপ্তাহ ধরে রেকর্ড গতির পর এই প্রথম এত বড় পতন দেখল বাজার। বিশ্ব বাজারে সোনার দাম এখন নেমে এসেছে প্রতি আউন্স $৪,১১৮.৬৮-এ, যা মে ২০২৫ সালের পর সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক পতন। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারেও।

কেন কমল সোনার দাম ভারতে কী প্রভাব

আন্তর্জাতিক বাজারের এই অস্থিরতা ভারতের বুলিয়ন মার্কেটেও স্পষ্ট। MCX (মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ)-এ ডিসেম্বরের ডেলিভারির সোনা ১ শতাংশ কমে প্রতি ১০ গ্রাম ₹১,২৩,২২২-এ ট্রেড করছিল। একইসঙ্গে, রুপোর দাম ১.৫ শতাংশ কমে প্রতি কেজি ₹১,৪৬,৩৬৫-এ দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহের শুরুতেই সোনায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন দেখা যায়, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক দিনে বড় পতনের অন্যতম।

পতনের পেছনে তিন প্রধান কারণ

স্বর্ণের দামে এই আকস্মিক পতনের পেছনে বিশেষজ্ঞরা তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন

১. মুনাফা বা প্রফিট বুকিং দীর্ঘদিন ধরে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় থাকায় বিনিয়োগকারীরা এখন মুনাফা ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। এর ফলে গোল্ড-ব্যাকড ইটিএফ (ETF) থেকে বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে, যা দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

২. শক্তিশালী মার্কিন ডলার গত তিন সেশন ধরে ডলার সূচক (Dollar Index) ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। ডলারের মূল্য বাড়লে অন্যান্য মুদ্রার সাপেক্ষে সোনা কেনা ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এর ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চাহিদা কমেছে।

৩. আমেরিকা-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নতির আশা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ (Safe Haven) হিসেবে সোনা কেনা থেকে বিরত থাকছেন। সেফ হ্যাভেন হিসেবে সোনার চাহিদা কমার কারণে এর দামে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।

ভবিষ্যৎ কী সি‌পিআই এবং ফেডের সিদ্ধান্তের দিকে নজর

বর্তমানে বাজারের নজর রয়েছে আমেরিকার কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI) ডেটার ওপর। যদি CPI ৩.১ শতাংশ স্তরে স্থিতিশীল থাকে, তবে আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে। সুদের হার কমলে সোনার বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যা দামকে সমর্থন জোগাতে পারে। রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের সিনিয়র অ্যানালিস্ট জিগর ত্রিবেদীর মতে, দুর্বল আন্তর্জাতিক সেন্টিমেন্টের কারণে MCX ডিসেম্বরের সোনা ₹১,২৩,০০০ প্রতি ১০ গ্রাম পর্যন্ত নামতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি আবার শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস এখনও ইতিবাচক

সাম্প্রতিক এই পতন সত্ত্বেও, বিশেষজ্ঞরা সোনার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও ইতিবাচক। জেপি মর্গানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের মধ্যে সোনার দাম প্রতি আউন্স $৫,০৫৫ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে তা $৮,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান পতন একটি টেকনিক্যাল কারেকশন, যা দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা নয়। যারা দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ রাখেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে। স্বল্পমেয়াদে বাজারে অস্থিরতা থাকতে পারে, কিন্তু আগামী মাসগুলিতে সোনার দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *