আফিমে আসক্তি, নেশার সাম্রাজ্য! ভিক্টোরিয়া ছিলেন বিশ্বের ‘বৃহত্তম ড্রাগ র‍্যাকেটের’ নেত্রী? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

যদি আপনি প্রায় দেড়শো বছর পেছনে ফিরে তাকান, তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম মাদক সাম্রাজ্যের পিছনে কোনো গ্যাংস্টার বা মাফিয়াকে নয়, বরং একজন রানীকে দেখতে পাবেন! হ্যাঁ, ইতিহাসবিদদের কাছে পরিচিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ও আড়ম্বরের প্রতীক মহারানী ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। লেখক স্যাম কেলির বই ‘হিউম্যান হিস্টরি অন ড্রাগস’-এ দাবি করা হয়েছে যে ভিক্টোরিয়া ছিলেন এক বিশাল মাদক পাচার চক্রের নেত্রী।

কেলির মতে, ১৯ শতকের এই মহারানী ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসার হাল ধরেছিলেন, যার পেছনে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পুরো শক্তি। এই মাদক ব্যবসা থেকে অর্জিত আয় গোটা ব্রিটেনকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

মহারানীর ব্যক্তিগত নেশা ও আফিমের আসক্তি

বইটিতে দাবি করা হয়েছে যে মহারানী ভিক্টোরিয়া নিজেও মাদকের প্রতি আসক্ত ছিলেন। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করতেন, যার মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল আফিম। তিনি লডেনাম (মদ ও আফিমের মিশ্রণ) হিসেবে এটি নিতেন। কেলির বক্তব্য, “প্রতি সকালে মহারানী লডেনামের বড় একটি চুমুক নিতেন।” এছাড়াও, কোকেনও ছিল তার পছন্দের, যা সেই সময় আইনত বৈধ ছিল। কোকেন তাকে আত্মবিশ্বাস দিত। এমনকি, তার ডাক্তাররা মাসিক সংক্রান্ত সমস্যার জন্য গাঁজা এবং প্রসবের সময় ক্লোরোফর্ম ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন।

অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় আফিম বাণিজ্য

মহারানী ভিক্টোরিয়ার এই নেশা কেবল ব্যক্তিগত ছিল না, বরং তা পুরো মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল। ১৮৩৭ সালে তিনি যখন সিংহাসনে বসেন, তখন চীনা চা আমদানি করার কারণে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে সঙ্কট তৈরি হয়। চা কেনার জন্য ব্রিটেনের রৌপ্য ভাণ্ডার শেষ হতে বসেছিল। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে আফিমের চাষ শুরু হয় এবং বিপুল পরিমাণে তা চীনে বিক্রি করা হতে থাকে।

কেলি জানিয়েছেন, “চায়ের জন্য চীনকে দেওয়া সমস্ত রূপা, এমনকি তার চেয়েও বেশি, ব্রিটেনকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এখন ব্রিটেন নয়, বরং চীন বাণিজ্য ঘাটতিতে ডুবে যায়।” দ্রুতই আফিম বিক্রি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট আয়ের ১৫% থেকে ২০% হয়ে ওঠে, যা সাম্রাজ্যকে মজবুত করতে অপরিহার্য ছিল।

প্রথম আফিম যুদ্ধ এবং হংকংয়ের জন্ম

চীন এই মাদক ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করলে, চীনা কর্মকর্তা লিন জেক্সু রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে “বিষাক্ত ওষুধ” রপ্তানি বন্ধ করে চা ও রেশমের ব্যবসা করার আবেদন জানান। কিন্তু রানী তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৮৩৯ সালে লিন দক্ষিণ চীন সাগরে ২৫ লক্ষ পাউন্ড মূল্যের ব্রিটিশ আফিম বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করে দেন। এর প্রতিশোধ নিতে মহারানী ভিক্টোরিয়া প্রথম আফিম যুদ্ধ শুরু করেন। এই যুদ্ধে চীন পরাজিত হয় এবং চুক্তির মাধ্যমে হংকং ব্রিটেনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া নতুন বন্দর খোলা হয় এবং ব্রিটিশ নাগরিকরা চীনা আইন থেকে রেহাই পায়। কেলি বলেন, “মহারানী প্রমাণ করে দেন যে চীনকে সহজেই পরাজিত করা যায়।” এটি ছিল সাম্রাজ্য এবং মুনাফার এক বিরাট জয়।

কোকেন রপ্তানিতে আপত্তি কেন?

তবে, মহারানীর একটি অদ্ভুত নীতিও ছিল। তিনি কোকেনকে স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিদায়ক হিসেবে মানলেও, তা চীনে বিক্রি করতে অস্বীকার করেন। কেলির লেখায়, “তিনি সারা বিশ্বে আফিম বিক্রি করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু কোকেনে যেন কেউ হাত না দেয়!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *