‘কার্বাইড গান’ কেড়ে নিল অসংখ্য শিশুর দৃষ্টি, কীভাবে কাজ করে এই ‘খেলনা’ বন্দুক? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
এবছরের দিওয়ালিতে দেশজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ‘কার্বাইড গান’ বা ‘দেশি ফায়ারক্র্যাকার গান’। মূলত খেলনা বা বানর তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে বিক্রি হলেও, এটি যে আসলে একটি বিপজ্জনক বিস্ফোরক যন্ত্র, তা প্রমাণ হয়েছে অসংখ্য দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। এই বিস্ফোরক বন্দুকের আঘাতে বহু শিশু মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। দিওয়ালিতে আতশবাজি পোড়ানোর সময় শুধু এই রাজ্যেই ৩০০-র বেশি মানুষ কার্বাইড গানের আঘাতে চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। বেসরকারি সূত্রে এই আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০-র কাছাকাছি বলে দাবি করা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লিতেও একই ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
জখমদের বেশিরভাগই ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু, যারা ক্ষারজাত পোড়া ও কর্নিয়ার মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতাল, এইমস এবং জয় আরোগ্য হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে দিওয়ালির রাতেই ৪০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হন, যার ফলে হাসপাতালগুলিতে কার্যত শয্যার অভাব দেখা দেয়।
চিকিৎসকদের দাবি, কার্বাইড গানের আঘাতে মধ্যপ্রদেশে ১৪ থেকে ৩০ জন শিশু স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, এবং আরও ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আঘাতগুলির মধ্যে রয়েছে গভীর কর্নিয়া আলসার, রাসায়নিক পোড়া এবং রেটিনার ক্ষতি, যার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অ্যামনিওটিক মেমব্রেন গ্রাফট বা কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি প্রয়োজন হচ্ছে। ১৭ বছরের নেহা এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে, ১২ বছরের এক শিশুর এইমসে অস্ত্রোপচার হয়েছে, আর ৭ বছরের যোগেশের মুখ ঝলসে গেছে আগুনে।
কী এই কার্বাইড গান?
এগুলো সাধারণত পিভিসি বা টিনের পাইপে তৈরি করা হয়। এর ভেতরে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, গানপাউডার এবং দেশলাইয়ের মাথার রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এতে জল ঢাললেই ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি হয়। এই অ্যাসিটিলিন গ্যাস উচ্চ শব্দে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং প্লাস্টিক বা ধাতব টুকরো দ্রুত গতিতে ছিটকে বেরিয়ে শার্পনেলের মতো আঘাত করে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য চোখে গুরুতর রাসায়নিক পোড়া সৃষ্টি করে, যা দ্রুত টিস্যু নষ্ট করে দেয়।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে দীপাবলির আগেই ১৮ অক্টোবর এই কার্বাইড গান বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাজারে তা খোলাখুলিভাবে বিক্রি হয়েছে। বিদিশায় ৬ জন এবং ভোপালে এক বিক্রেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হলেও, প্রশাসন স্বীকার করেছে যে আগাম প্রচার না হওয়ায় মানুষ বিপদের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিল না। হাসপাতালে জখম শিশুদের দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব।
‘Carbide Guns’, Which Caused Spate of Eye Injuries Around Diwali, Must Be Banned: Doctors
The All India Ophthalmological Society also urged an information campaign as well as medical preparedness in light of the recent cases.https://t.co/ZXj4iEqvE0
— The Wire (@thewire_in) October 25, 2025